ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কর্মসংস্থানে আবুল হোসেন, এখন স্বাবলম্বী
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের ভাড়ালিয়ারচর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক মো. আবুল হোসেন (৩৬)। প্রায় ৭-৮ বছর ভিক্ষা করে নিজের ও মায়ের জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন আর ভিক্ষার ঝুঁকিতে নেই তিনি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে দুধ ও চা বিক্রি করে আজ সংসার চালাচ্ছেন এই প্রতিবন্ধী যুবক।
আবুল হোসেনের সংসারে আছেন শুধু মা হাসিনা বেগম (৫৬)। বছর তিনেক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার বাবা ছত্তার বিশ্বাস। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই আলাদা হয়ে যাওয়ায় মায়ের দায়িত্ব এসে পড়ে আবুলের কাঁধে। ছোট্ট ভিটে আর প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো আয়ের উৎস ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ভ্যান ভাড়া করে ভিক্ষা শুরু করেছিলেন তিনি।
জন্মের এক বছর পর হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাত-পাসহ পুরো শরীর শুকিয়ে যায় আবুলের। তখন থেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেন তিনি। প্রায় আট বছর ভিক্ষা করেও জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। মানসিক শান্তিও পাননি। এ অবস্থায় বোয়ালমারীর সমাজসেবক সুমন রাফি এগিয়ে আসেন। তার সহায়তায় প্রায় ৮-৯ মাস আগে আবুল হোসেন ভিক্ষা ছেড়ে দুধের ব্যবসা শুরু করেন।
সুমন রাফি ব্যবসার সরঞ্জামসহ ১০ হাজার টাকা পুঁজি দেন। সেই টাকা দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করে বোয়ালমারী বাজারের মিষ্টির দোকানে বিক্রি করেন আবুল। প্রতিদিন ২-৩ মণ দুধ বিক্রির পাশাপাশি বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির সামনে চা বিক্রি করেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয় তার।
স্থানীয়রা জানান, আবুল হোসেন ভিক্ষা ছেড়ে এখন দুধ ও চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। আগে যাকে ভিক্ষুক হিসেবে দেখতেন, এখন তাকেই স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী হিসেবে দেখছেন তারা।
আবুল হোসেন বলেন, ভিক্ষা করে খেতে লজ্জা লাগতো। নিজের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেও চাইনি হাত পেতে বাঁচতে। এখন দুধ আর চা বিক্রি করে মায়ের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারছি-এতেই শান্তি।
তিনি আরও বলেন, “আমার যদি একটি ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার থাকতো, তাহলে চলাফেরায় অনেক সুবিধা হতো।”
তার মা হাসিনা বেগম বলেন, সুমন রাফি ভাইয়ের সহযোগিতায় আবুল ভিক্ষা ছেড়ে দিয়েছে। এখন দুধ ও চা বিক্রি করে আমাদের ভালোভাবে চলছে।
এ প্রসঙ্গে সুমন রাফি বলেন, আবুলের দুরবস্থা দেখে আমি তার পাশে দাঁড়িয়েছি। পুঁজি দিয়ে দুধের ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করেছি, পরে চায়ের দোকানের ব্যবস্থা করেছি। এখন সে স্বাবলম্বী।
ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, আবুল হোসেনের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরও সুযোগ-সুবিধা পেতে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ভিক্ষা ছেড়ে কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়ায় আবুল হোসেন সমাজের জন্য অনুকরণীয়। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
বিআলো/এফএইচএস