ভূমি ব্যবহার ও কৃষিভূমি সুরক্ষায় কঠোর বিধান
নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে কৃষিজমি দ্রুতহারে কমছে—এমন উদ্বেগ মাথায় রেখে ভূমি মন্ত্রণালয় খসড়া করেছে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষিভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’। খসড়ায় কৃষিজমি রক্ষায় কঠোর বিধি-নিষেধ ও দণ্ডবিধি করা হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহারে বা অন্য কোনো শ্রেণিতে রূপান্তর করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা। এছাড়া প্রথম দফার লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য থাকবে; পুনরাবৃত্তিতে শাস্তি দ্বিগুণ হবে। অধিকারভুক্ত অর্থবহ উপকরণ ও নির্মাণ সামগ্রী আদালত জব্দ করে নিলামে বিক্রি করার বিধানও রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটি নতুন সংস্থা ‘বাংলাদেশ ভূমি জোনিং ও ভূমি সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হবে। কর্মকর্তারা বলছে, কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী ভূমির বিদ্যমান ব্যবহার, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভূমিরূপ বিবেচনা করে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে ‘ভূমি জোনিং ম্যাপ’ ও স্থানিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। কর্তৃপক্ষ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ভূমি সংস্কার বোর্ড কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সর্বমোট কৃষিভূমির কমপক্ষে ৮০ শতাংশ কৃষিকাজের জন্য সংরক্ষণ করবে। ভূমি জোনিংয়ের উদ্দেশ্যে ভূমিকে সর্বোচ্চ ১৪টি ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণিতে ভাগ করার প্রস্তাব রয়েছে—যাতে কৃষি অঞ্চল, কৃষি-মৎস্য চাষ অঞ্চল, নদী-খাল, জলাশয়, পরিবহন, শহুরে ও গ্রামীণ বসতি, বাণিজ্যিক ও শিল্প অঞ্চল, বনাঞ্চল, সাংস্কৃতিক অঞ্চল ও পাহাড়-টিলা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
খসড়া অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কৃষিভূমি শ্রেণি পরিবর্তন বা কৃষিজমির অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে অকৃষি ও অন্যান্য শ্রেণির ভূমি কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে কোনো বাধা থাকবে না। রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব বিবেচনায় ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পরিমাণ কৃষিজমি উন্নয়ন প্রকল্প, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কৃষিসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহার করার জন্য ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।
খসড়ায় অন্যান্য জরুরি বিধানও রাখা হয়েছে—যেমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অননুমোদিতভাবে কৃষিজমি দখল করলে কর্তৃপক্ষ ওই স্থাপনা অপসারণ, বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে পারবে; এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, হাউজিং সোসাইটি, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, এনজিও বা ক্লাব যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ কৃষিজমি দখল রাখে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন-২) মো. মঈনুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, “আমাদের মানুষ বেশি কিন্তু ভূমি কম। তাই আমাদের কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। ভূমি উপদেষ্টা, পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা এবং কৃষি উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা একটি অধ্যাদেশের খসড়া করেছি; সেখানে মূল ফোকাস কৃষিজমি সুরক্ষা।” তিনি জানান, খসড়াটি ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হলেও পর্যবেক্ষণের পর তা ফেরত এসেছে এবং উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনায় কৃষিজমি সুরক্ষা বিষয়টি আরও জোরদার করা হয়েছে।
অধিকর্তারা বলছেন, খসড়া সম্পর্কে মতামত গ্রহণের পর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করা হবে এবং পরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। জেলা-স্তরে জমি জোনিং ম্যাপ সংক্রান্ত আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য জেলা ও বিভাগীয় কমিটি থাকার ধারাও খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ভূমিতে জ্বালানি, খনিজ বা প্রত্নসম্পদ পাওয়া বা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন সরকার সেই সম্পদ আহরণ বা অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এ আইন বাধা হবে না; তবে সে বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।
খসড়া অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হলে তা দ্রুতই মাঠে প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দেয় যোগ্য কর্তৃপক্ষ—তারা জানান, এর উদ্দেশ্য দেশের কৃষিভূমি সংরক্ষণ করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভূমি ব্যবহারে জোনভিত্তিক পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
বিআলো/এফএইচএস