ভোট নিয়ে সংশয়, ঝুলে আছে তিনটি ইস্যু
আইনসভার গঠন, নির্বাচনের সময় ও জুলাই সনদে মতভেদ
রতন বালো: আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও তিনটি বড় ইস্যুতে মতানৈক্য কাটেনি। আইনসভার গঠন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্রম, আর বহু আলোচিত জুলাই সনদ—এই তিনটি বিষয়েই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে কিছু অগ্রগতি হলেও “আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি।”
প্রথম ইস্যু আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে নির্বাচনের পদ্ধতি। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চান—নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে এমপি নির্বাচন আর উচ্চকক্ষে আসনের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন চায়—উভয় কক্ষে দলগুলোর মোট প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সদস্য বণ্টন। এনসিপি চায় নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতি।
দ্বিতীয় বিতর্ক হলো—কোন নির্বাচন আগে হবে। বিএনপি জাতীয় নির্বাচন আগে চায়। কিন্তু জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করছে। তাদের যুক্তি, বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন তুলনামূলকভাবে প্রভাবমুক্ত হতে পারে, ফলে নির্বাচনী কমিশনের সক্ষমতা যাচাই হবে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।” তবে বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস এই দাবি নাকচ করে বলেছেন, “একেকজন একেক দাবি তুলে নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চাইছে।”
তৃতীয় ইস্যু “জুলাই সনদ”। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে কিছু আশার আলো জেগেছিল। বলা হয়েছিল ২০২৬ সালের রমজানের আগে নির্বাচন হতে পারে। তবে শর্ত ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও কিছু সাংবিধানিক সংস্কার।
সরকার জানিয়েছিল, জুনের মধ্যে ঐকমত্য হলে জুলাইয়ের শুরুতে সনদ দেওয়া হবে। কিন্তু এনসিপি বলছে, সরকার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সনদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, ৩ আগস্ট এনসিপি নিজেই “জুলাই ঘোষণাপত্র” দেবে।
এছাড়া কমিশন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করে তা সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি এটিকে সমর্থন করলেও বিএনপি এর বিরোধিতা করে বলছে, এতে নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বাঁধা হবে।
সব মিলিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মতভেদগুলো নিরসন না হলে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সংশয় কাটবে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে “জুলাই সনদ” চূড়ান্ত করতে চাইলেও তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েই রয়েছে অনিশ্চয়তা।
বিআলো/তুরাগ