মনোনয়ন বিতর্কে ক্ষুব্ধ মাগুরা বিএনপি, সক্রিয় রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা কাজী কামালের
ত্যাগীদের কান্না শুনতে চায় না হাই কমান্ড
মাগুরা-২ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকাশ্যে
এস এম শিমুল রানা, মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরা-২ আসনকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট এবার প্রকাশ্যে বিস্ফোরিত হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা ও অবমূল্যায়নের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির প্রবীণ নেতা কাজী সালিমুল হক কামাল সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক আবেগঘন ও তীব্র ভাষার পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। পোস্টে কাজী কামাল উল্লেখ করেন, ২০০৮ সালের পর তিনি রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস শেষে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। মুক্তির সময় মাগুরাবাসীর যে ভালোবাসা ও চোখের পানি তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তা আজও তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করে।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে মাগুরার ত্যাগী নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, জেল-জুলুম ও অমানুষিক নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপির পতাকা আগলে রেখেছেন। অথচ আজ সেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের আবেগ, ত্যাগ ও মতামত দলীয় হাই কমান্ডের কাছে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত।
ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা হঠাৎ নয়—বরং দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, মাগুরা-২ আসনের ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন লিখিতভাবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। এছাড়া ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৮ জন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং দুইজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানও এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন। এত বড় প্রতিবাদ সত্ত্বেও দলীয় নেতৃত্ব তাদের বক্তব্য শোনার প্রয়োজন মনে করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কাজী কামাল আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রদল ও যুবদল থেকে উঠে আসা পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে দলের আদর্শিক ভিত দুর্বল করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে দলের অস্তিত্বই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসলামিক জাগরণের প্রেক্ষাপটে একজন হিন্দু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় বহু ধর্মভীরু ভোটার জামায়াতে ইসলামির দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও তৃণমূল নেতাদের বরাতে তুলে ধরেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “তৃণমূলই দলের প্রাণ। ত্যাগী কর্মীদের উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে দল শক্তিশালী হয় না, ভেতর থেকে ক্ষয়ে যায়।” মাঠপর্যায়ের কর্মীরা যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, তার দায়ভার কে নেবে—এই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
দীর্ঘ কারাবাসে পরিবারের ওপর চরম মানসিক ও আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করে কাজী সালিমুল হক কামাল জানান, পরিবারের একান্ত অনুরোধে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
শেষে ত্যাগী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কর্মীদের চোখের পানি কখনো দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। যারা দলের খুঁটি, তাদের অবজ্ঞা করে কোনো নেতৃত্বই বেশিদূর যেতে পারে না।”
তার এই ফেসবুক পোস্ট ইতোমধ্যে মাগুরা-২ আসনসহ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিআলো/তুরাগ



