মন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎ বেড়ে যায় শাজাহান খানের সম্পদ
দুদকের তিন মামলায় অভিযুক্ত সাবেক নৌমন্ত্রী ও তাঁর পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ সঞ্চয়ের অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে।
দুদকের মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, শাজাহান খান ১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে নয়টি ব্যাংক হিসাবে ৮৬ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় আসামি করা হয়েছে শাজাহান খান ও তাঁর স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগমকে। রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
তৃতীয় মামলায় শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানের বিরুদ্ধেও প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোটিশ জারি করেছে দুদক।
দেনাদার থেকে কোটিপতি
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় শাজাহান খান নিজেকে দেনাদার হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তখন তাঁর মাসিক আয় ছিল ৫৭ হাজার টাকা এবং স্ত্রী–শিক্ষক রোকেয়া বেগমের মাসিক আয় ছিল ৫ হাজার টাকা। নগদ অর্থ ছিল না, বরং ঋণ ছিল ৪২ লাখ টাকার বেশি। তবে নৌপরিবহন মন্ত্রী হওয়ার পর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে তাঁর সম্পদ। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি ও তাঁর পরিবারের নামে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে বহু স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ, আবাসন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
প্রভাব ও দখলদারিত্বের অভিযোগ
মন্ত্রী হওয়ার পর শাজাহান খান মাদারীপুরে ডায়াবেটিক হাসপাতাল, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করেন। হাসপাতালের সভাপতির পদ নিজে দখল করেন, রেড ক্রিসেন্টে বসান ঘনিষ্ঠজনকে এবং চেম্বারের দায়িত্ব দেন ছোট ভাইকে। প্রেস ক্লাবও দখল করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সমালোচনা ও মামলা
শাজাহান খানের বিরুদ্ধে অতীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবে সেসব মামলা আলোর মুখ দেখেনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর ও পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ইতিমধ্যে তিনটি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিআলো/এফএইচএস