মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) এর ওফাতে উম্মতের শোক
বিআলো ডেস্ক: মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্তগুলোর একটি হলো প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকাল। তিনি ছিলেন আল্লাহর সর্বশেষ রসুল, মানবতার জন্য রহমত এবং উম্মতের জন্য পথপ্রদর্শক।
তার ইন্তেকালের সংবাদ মদিনার বাতাসকে ভারী করে তুলেছিল, সাহাবাদের হৃদয়কে ভেঙে দিয়েছিল, আর আসমান-জমিন যেন শোকে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ নিশ্চয়ই আপনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে। (সুরা জুমার:৩০) এই আয়াতই রসুল রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের অনিবার্য বাস্তবতাকে নিশ্চিত করেছিল।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্ত-
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের শেষ সময়ে অসুস্থতা ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। সহিহ বর্ণনায় এসেছে, তিনি প্রায় ১৩ দিন অসুস্থ ছিলেন এবং এ সময়ে তিনি বারবার সাহাবাদের নামাজের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিতেন। আয়েশা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনের শেষ কথা ছিল,
الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ، وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ নামাজ, নামাজ! আর তোমাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। (সুনানু আবি দাউদ:৫১৫৬) তিনি মৃত্যুশয্যাতেও উম্মতের কল্যাণ ও দায়িত্বের কথা স্মরণ করছিলেন।
ইন্তেকালের বেদনাময় ক্ষণ-
সোমবার, ১২ রবিউল আউয়াল, হিজরি ১১ (খ্রিস্টাব্দ ৬৩২) সকালবেলায় রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রা. এর কক্ষে শায়িত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর রসুল আমার কোলের ওপর মাথা রেখেছিলেন, তখনই তার ইন্তেকাল হয়। (সহিহ বুখারি: ৪৪৩৪) এই দৃশ্য ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্ত।
সাহাবাদের হৃদয়ে শোকের ঝড়-
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের সংবাদ শুনে সাহাবারা যেন হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ক্রোধে তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে বললেন, যে বলবে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেছেন, আমি তার ঘাড় উড়িয়ে দেবো। বরং তিনি তার রবের কাছে গেছেন যেমন মুসা আ. গিয়েছিলেন। ( সহিহ বুখারি:৪৪৫৪) কিন্তু আবু বকর রা. দৃঢ়চিত্তে মসজিদে এসে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ۬ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُۚ أَفَإِيْن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ ٱنقَلَبْتُمۡ عَلَىٰٓ أَعْقَـٰبِكُمۡ وَمَن يَنقَلِبۡ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيۡـًٔ۬ا وَسَيَجۡزِى ٱللَّهُ ٱلشَّـٰكِرِينَ মুহাম্মদ তো একজন রসুলই ছিলেন। তার পূর্বেও অনেক রসুল চলে গেছেন। তিনি মারা গেলে অথবা নিহত হলে কি তোমরা উল্টে যাবে? (সুরা আল ইমরান:১৪৪) এই আয়াত শুনে সাহাবারা যেন হুঁশ ফিরে পান, এবং মেনে নেন যে প্রিয় রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যিই ইন্তেকাল করেছেন।
উম্মতের জন্য শোকের কাল-
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকাল ছিল শুধু একটি মৃত্যু নয়; এটি ছিল উম্মতের জন্য পরীক্ষার সূচনা। তিনি ছিলেন কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা, রিরাতের শিক্ষার মূর্ত প্রতীক। তার বিদায় উম্মতকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিলেও, তার রেখে যাওয়া কুরআন ও সুন্নাহ চিরন্তন দিশারীর ভূমিকা পালন করে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন এগুলো আঁকড়ে ধরবে ততদিন কখনও পথভ্রষ্ট হবে না,আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নাহ। (মুয়াত্তা মালিক:১৬০৯)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরকালের গমন ছিল উম্মতের জন্য গভীর শোক ও পরীক্ষার সময়। কিন্তু এটিই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তার শিক্ষাই আমাদের আলো। তার রেখে যাওয়া কুরআন ও সুন্নাহর পথই আমাদের একমাত্র মুক্তির রাস্তা।
বিআলো/শিলি