মা
রাজেন্দ্র শর্মা শলভ
মা!
যে দেবমূর্তিগুলো দিয়ে
তুমি মন্দির সাজিয়েছিলে,
সেগুলো নীরব কেন?
অনেক আগে থেকে
সঠিক দিন-ক্ষণ মনে নেই,
তবে যখন থেকে পৃথিবীকে বুঝতে শিখেছি,
দেখেছি তোমাকে
সেসব দেবতার পূজায় নিমগ্ন।
সম্ভবত এই কারণেই,
যখন তুমি হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলে,
আমি দাঁড়িয়েছিলাম তোমারই দেবতাদের সামনে,
জোড় হাতে, প্রার্থনায় নিবিষ্ট।
আমি চেয়েছিলাম তোমার হাসি, তোমার জীবন।
আমার অশ্রু দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিলাম তাদের পা।
কিন্তু না!
তোমার দেবতারা তখনও নীরব রইল।
যেদিন থেকে তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে,
আমি আর পারিনি
তোমার দেবতাদের পূজা করতে,
তবু পারিনি
তাদের মন্দির থেকে সরিয়ে দিতেও।
আমি তোমার উত্তরাধিকার আগলে রেখেছি,
মা।
আর যখন তোমার স্মৃতির ছায়ায় আচ্ছন্ন হই,
চুপচাপ বসে দেখি তাদের
তোমার দেবতাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
দেখি, তাদের মুখের ওপরে আঁকা তোমার মুখ।
তুমিও চুপচাপ তাকিয়ে থাকো,
তুমিও নীরব থাকো,
ঠিক যেমন মন্দিরের দেবমূর্তিরা।
* ইংরেজী থেকে অনুবাদ তালুকদার লাভলী
চাঁদ ও প্রভুরা
রাজেন্দ্র শর্মা শলভ
চাঁদ ও প্রভুরা
চাঁদ আমার জানালার পাশেএসে দাঁড়ায়,
ভালোবাসতে শেখায়
উদ্দীপনায়, স্নেহে ভরিয়ে দিয়ে
চলে যায়।
ভোর হলে,
পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন
সব দখল করে নেয়
আমার দেশের প্রভুরা।
তাদের কথার বিষ
আমার অস্তিত্ব ভরে তোলে ঘৃণা আর বিদ্বেষে।
ধীরে ধীরে, আমার ভেতরে
স্বার্থপরতার বীজ
অঙ্কুরিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
এবং আমি,
অন্যদের ভালোবাসার বদলে,
তীব্র হাহাকারে উপলব্ধি করি
আমিই যেন ভালোবাসাহীন।
আমি এখন নিজেকেই ভয় পাই।
ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই,
চাঁদের মৃদু ফিসফিস শুনতে চাই,
তার শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করতে চাই।
আমার কাছে চাঁদ
আমার দেশের প্রভুদের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান।
আমি জানিনা,
আর কতদিন চাঁদ
আমার জানালায় এসে দাঁড়াবে,
আর কতদিন আমি ভালোবাসার বীজ বুনে যাবো।
এই দিনে দিনে,
শাসকের অশুভ, কালো মেঘ
আকাশ জুড়ে ঘনিয়ে আসছে।
* ইংরেজী থেকে অনুবাদ তালুকদার লাভলী
– কবি রাজেন্দ্র শর্মা শলভ। যিনি সাহিত্য ও গণমাধ্যম জগতে ‘শলভ’ নামে বেশি পরিচিত। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গণমাধ্যম ও শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। দিনের বাকি সময়ে বিভিন্ন ধরনের অডিও-ভিজ্যুয়াল বিষয়বস্তু প্রযোজনা করেন। তবে অন্তরে তিনি সর্বদাই একজন কবি। কবিতার মধ্যেই তিনি নিজের মুক্তির সন্ধান পান এবং তাই হৃদয়গ্রাহী সংক্ষিপ্ত কবিতা রচনা করেন। যা পাঠকের সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারে। তিনি কবিতার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে চান এবং গণমাধ্যমেও তিনি সম্পৃক্ত।