• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    মাত্র ১১২ টাকায় সরকারি চাকরি: স্বচ্ছ নিয়োগে দেশজুড়ে প্রশংসায় নারায়ণগঞ্জের ডিসি জাহিদুল ইসলাম 

     dailybangla 
    03rd Nov 2025 6:21 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    মনিরুল ইসলাম মনির: ঘুষ, তদবির, অনিয়ম— সরকারি চাকরির নিয়োগে এই শব্দগুলোই যেন বহুদিনের বাস্তবতা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে এই ধারণা ভেঙে এক অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা। মাত্র ১১২ টাকায় আবেদন করে ১৪ জন প্রার্থী সরকারি চাকরি পেয়েছেন, ঘুষ বা প্রভাব ছাড়াই— সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায়। এই উদ্যোগ এখন শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয়, সারাদেশেই প্রশংসিত হচ্ছে।

    সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখায় এক অনাড়ম্বর আয়োজনে নিয়োগপ্রাপ্তদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

    নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন— হাবিব উল্লাহ, মো. জাকারিয়া, জান্নাতুল বুশরা মালেক, ইয়াছিন আরাফাত, মাহবুব হাসান, হাবিবুর রহমান সরকার, তাইজুল ইসলাম, শিপলু, জামাল হোসেন, জুবায়দা মারুফা সোহা, আজিজুল হক বাপ্পী, আতিকুর রহমান, আব্দুল বাছেদ ও মো. শাহ পরান।

    তারা জানান, বিজ্ঞপ্তি দেখে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন। মাত্র ১১২ টাকায় সরকারি চাকরি পাওয়া তাদের কাছে ছিল কল্পনার বাইরে এক বাস্তবতা। নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে তারা আনন্দে উচ্ছ্বসিত ও জেলা প্রশাসকের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

    ডিসি মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, “গত ২৪ অক্টোবর ৭টি ক্যাটাগরিতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১,২৩৩ জন প্রার্থী। ওই দিনই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৮ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। রবিবার (২ নভেম্বর) গোয়েন্দা প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সোমবার নিয়োগপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে।”

    তিনি বলেন, “পুরো প্রক্রিয়া ছিল দ্রুত, দক্ষ ও শতভাগ স্বচ্ছ। কেউ ঘুষ দেয়নি, কেউ ঘুষ নেয়নি— এমন একটি উদাহরণ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি।”

    সার্টিফিকেট পেশকার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত তাইজুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান সময়ে মাত্র ১১২ টাকায় আবেদন করে ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি পাওয়া অবিশ্বাস্য। জেলা প্রশাসক স্যারের উদ্যোগ না থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এই সুযোগ পেত না। আমাদের মধ্যে কেউই এক টাকাও ঘুষ দিইনি।”

    নাজির কাম ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত আড়াইহাজারের দয়াকান্দার হাবিব উল্লাহ বলেন, “জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ। এতটা স্বচ্ছ নিয়োগ আগে কখনও দেখিনি। প্রতিটি ধাপ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো প্রকার অনিয়ম বা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়নি। যদি এই ধারা বজায় থাকে, তাহলে সরকারি চাকরিতে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।”

    অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. জাকারিয়া বলেন, “আমি জেলা প্রশাসক স্যারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড আগেই দেখেছি। তাই নিশ্চিত ছিলাম, উনার নেতৃত্বে ঘুষ ছাড়াই চাকরি পাওয়া সম্ভব— আজ সেটিই প্রমাণিত হলো।”

    সার্টিফিকেট সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শিপলু বলেন, “ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। আগে বিশ্বাসই হয়নি, কিন্তু নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বুঝলাম এটা সত্যি। জেলা প্রশাসক স্যার এখন আমাদের কাছে এক অনুকরণীয় আদর্শ।”

    মিউটেশন কাম সার্টিফিকেট সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত জুবায়দা মারুফা সোহা বলেন, “জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের সবার জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এত দ্রুত ও নিরপেক্ষ নিয়োগ আগে কখনও দেখিনি। উনি সত্যিই একজন মানবিক ও ন্যায়ের প্রতীক।”

    জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “সরকারি চাকরিতে নিয়োগ মানেই ‘যদি কিন্তু’— এই ধারণা সমাজে গড়ে উঠেছিল। আমরা সেই ধারণা ভাঙতে চেয়েছি। শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে এবং মাত্র ১১২ টাকায় সম্পন্ন করব— সেটিই করেছি।”

    তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে অগ্রগতি নিশ্চিত করা। তাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করা।”

    ডিসি আরও যোগ করেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা অনুযায়ী মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমাদের সন্তানরা চাকরি পাবে— এই নীতিই আমরা অনুসরণ করেছি। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের লক্ষ্য।”

    ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “স্যার আমাদের সার্বিকভাবে নির্দেশনা ও সহায়তা দিয়েছেন। তাঁর দিকনির্দেশনার কারণেই মাত্র ১১২ টাকায় এমন স্বচ্ছ নিয়োগ দিতে পেরেছি।”

    তিনি আশা প্রকাশ করেন, “নিয়োগপ্রাপ্তরা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা, নিষ্ঠা ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করবেন। তাদের সাফল্যই হবে এই উদ্যোগের প্রকৃত পুরস্কার।”

    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হুসাইন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা শিরিন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোনাব্বর হোসেন, সহকারী কমিশনার সায়মা রাইয়ানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

    মাত্র ১১২ টাকায় ঘুষমুক্ত নিয়োগের এই উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে। যা প্রমাণ করেছে— সততা, সুশাসন ও নৈতিক নেতৃত্ব থাকলে সরকারি চাকরিও হতে পারে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, ন্যায্য ও জনবান্ধব।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    December 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    293031