• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    মাদরাসা উন্নয়নে কচ্ছপগতি; ৭৩৬ ঠিকাদারের ৪৩৪ জনই লাপাত্তা 

     dailybangla 
    19th Jun 2025 9:42 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    রতন বালো: নির্ধারিত মেয়াদে ১৫২ মাদরাসার ১ শতাংশ কাজও শুরু করা যায়নি। ফলে এসব মাদরাসার উন্নয়নকাজ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যার বাস্তবায়নকারী সংস্থা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।

    একটি প্রকল্পের আওতায় দেশের তিনশ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে ছয়টি করে মোট ১৮শ মাদরাসার উন্নয়নকাজ করছে সরকার। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ দুই দফায় বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যায়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ৭৩৬ জন ঠিকাদারের মধ্যে ৪৩৪ ঠিকাদারের খোঁজ মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কেউ ভারতে পালিয়েছেন, কেউ আবার সাইট পরিদর্শন করছেন না। তবে অধিদপ্তর কাজ ফেলে পালানো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যও দিচ্ছে না।

    সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পে ঠিকাদারের খবর নেই। বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্টের দীর্ঘ সময় পর অনেকে ফিরে এসেছেন। একাধিক ঠিকাদার আত্মীয় দিয়ে কাজ শেষ করছেন। অনেকে আবার প্রভাবশালীদের কাছে উন্নয়ন কাজ দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে ৫ আগস্টের পর থেকে কাজ ফেলে লাপাত্তা ৪৩৪ জন ঠিকাদার। কাজ শুরুই হয়নি ১৫২টির।

    ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সংশোধিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ছয় হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। পরে সরকার আরো এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় দেয়। এখন আরো এক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এতে ব্যয় আরো বাড়ার সম্ভবনা উজ্জ্বল হয়েছে।

    প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত মেয়াদে ১৫২ মাদরাসার ১ শতাংশ কাজও শুরু করা যায়নি। ফলে এসব মাদরাসার উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যার বাস্তবায়নকারী সংস্থা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। সহযোগী বাস্তবায়নকারী সংস্থা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মূলত দরপত্র, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি তারাই দেখাশোনা করে।
    শিক্ষা প্রকৌশল ও মাদরাসা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নির্বাচিত মাদরাসাসমূহের উন্নয়ন’ নামে এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

    প্রকল্পের পুরো অর্থ সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। দেশের তিনশ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে ছয়টি করে মাদরাসা নির্মাণের কথা প্রকল্পের আওতায়।

    এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত জানান, দীর্ঘদিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ থাকায় চুক্তি বাতিল করে নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে। কাজগুলো ২০১৮ সালের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে সেটি ২০২২ সালের মূল্য অনুযায়ী করতে হবে। ফলে খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগছে। কিন্তু এর পরও এখন পর্যন্ত এক-চতুর্থাংশ ঠিকাদার লাপাত্তা। ফলে আগের কাজ বাদ দিয়ে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিছু কাজের দরপত্রও সম্পন্ন হয়েছে।

    বর্তমানে এ প্রকল্প দেখভাল করছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ থাকায় চুক্তি বাতিল করে নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে। কাজগুলো ২০১৮ সালের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে সেটি ২০২২ সালের মূল্য অনুযায়ী করতে হবে। ফলে খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগছে।

    মাদরাসার উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি খারাপ নয়। তবে কিছু মাদরাসা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কাজ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কারণ সেখানে ঠিকাদার নেই। ঠিকাদাররা উধাও।
    নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত জানান, যেসব ঠিকাদার যতটুকু কাজ করেছেন, তাদের কাজ মূল্যায়নে কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি কাজের মান, উন্নয়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করবে। সে অনুযায়ী বিল পরিশোধ করা হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬৩৩ মাদরাসায় কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন ১২টি প্রতিষ্ঠানে।

    জানা গেছে, ১ থেকে মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এমন মাদরাসার সংখ্যা ৪৬টি। ২৬-৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে এ সংখ্যা ৪৫টি। ৫১-৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৯৩টির। ৭৬-৯৯ শতাংশ কাজ হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২৭টি। শতভাগ কাজ (অবকাঠামো) করা মাদরাসার সংখ্যা ১ হাজার ২২৫টি। সবমিলিয়ে এ প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ( ভৌত অবকাঠামো) ৮২ শতাংশ।

    প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব মাদরাসায় কোনো কাজ হয়নি, তা বাতিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৫২ মাদরাসা প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছে। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, রাজধানীসহ কিছু জেলায় কাজ হয়নি এমন একাধিক মাদরাসা রয়েছে।

    বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চালনা বন্দর দাখিল মাদরাসায় এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঢাকা মহানগরের দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ আজগারুল উলুম দাখিল মাদরাসায়ও কোনো কাজ হয়নি। তুরাগের ভাটুরিয়া মহিলা মাদরাসায় কাজ শুরু হয়নি। অথচ অনুমোদিত প্রাক্কলিত মূল্য দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পে আসবাবপত্র সরবরাহ, শিক্ষক প্রশিক্ষণও যুক্ত রয়েছে। এরই মধ্যে এক হাজার ২২৯ মাদরাসার আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৯ মাদরাসায় আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে, যার অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। ৪১৯ মাদরাসার জন্য পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়াধীন।

    শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, মাদরাসার উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি খারাপ নয়। তবে কিছু মাদরাসা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের কাজ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কারণ সেখানে ঠিকাদার নেই। ঠিকাদাররা উধাও।

    তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে সিলেট অঞ্চল থেকে ঠিকাদার পালানোর ঘটনা বেশি। এখন তাদের বাদ দিয়েই নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য নতুন করে কিছু পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত করা হবে।

    প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে খুশি নন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতির দিকে তাকালে ভালোই মনে হবে। কিন্তু যেভাবে কাজ হয়েছে, তাতে কোথাও ভবন শেষ, আবার কোথাও কিছুই হয়নি। অনেক মাদরাসা বঞ্চিত। এ প্রকল্প নিয়ে বহু অভিযোগ-অনুযোগ। আশা করছি, মাদরাসার উন্নয়নে সরকার সামনে আরো ভালো প্রকল্প হাতে নেবে। যদিও ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যার বাস্তবায়নকারী সংস্থা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। সহযোগী বাস্তবায়নকারী সংস্থা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। মূলত দরপত্র, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি তারাই দেখাশোনা করে।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031