মিস আর্থ বাংলাদেশের মুকুট জিতলেন সুমাইয়া হারুন
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পর্যায়ের তরুণীদের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২৫’-এর মুকুট অর্জন করেছেন সুমাইয়া হারুন।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় মানবিক সংগঠন ছায়াতল বাংলাদেশ-এর স্কুল প্রাঙ্গণে কোমলমতি শিশুদের উপস্থিতিতে নতুন মিস আর্থ বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের মিস আর্থ বাংলাদেশ ফেরদৌসি তানভীর ইচ্ছা নবনির্বাচিত রানী সুমাইয়া হারুনের মাথায় মুকুট পরিয়ে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম, এসডিজি কো-অর্ডিনেটর ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের ওরাল সার্জন ডা. তাসিন আফরিন ডায়ানা, আন্তর্জাতিক আইন উপদেষ্টা তাহরিন জেরিন, এবং মিস কালচার গ্লোবাল ২০২৪ জয়ী জুমানা নাইলাত শখসহ অন্যান্য অতিথিরা।
২৪ বছর বয়সী সুমাইয়া হারুন একজন কানাডীয় বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি মডেল ও এসডিজি উদ্যোক্তা।
তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি কানাডিয়ান ওভারসিজ বিজনেস ইনকর্পোরেটেড-এ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত, যেখানে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছেন।
নতুন মিস আর্থ বাংলাদেশ হিসেবে সুমাইয়া এবার দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ‘মিস আর্থ’ প্রতিযোগিতায়—যা বিশ্বের অন্যতম বিগ ফোর আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা।
এই আয়োজন জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, যেখানে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয় জলবায়ু ন্যায়বিচার, বিশুদ্ধ পানি ও টেকসই নগরায়ণের ওপর।
বিজয়ের অনুভূতি প্রকাশ করে সুমাইয়া হারুন বলেন, একজন সত্যিকারের রাণী সৌন্দর্যের জন্য নয়, দায়িত্বের জন্য মুকুট পরেন। তিনি পৃথিবীকে রক্ষা করেন, হৃদয় জাগান, আর যেখানে দাঁড়ান, সেখানেই আশার পদচিহ্ন রেখে যান। আমি এমন এক রাণী হতে চাই, যিনি শুনবেন, শিখবেন এবং সৌজন্য দিয়ে নেতৃত্ব দেবেন। আমি কাজ করতে চাই টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ শিক্ষা ও তরুণ নেতৃত্বের পক্ষে। ‘মিস আর্থ’ কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি আন্দোলন-যেখানে সৌন্দর্য ও দায়িত্ব এক হয়ে যায়, এবং এক নারীর কণ্ঠস্বর হতে পারে এক জাতির পরিবর্তনের প্রেরণা।
মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম বলেন, নারী শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নন, তিনি জীবনের প্রতীক। এই বছর এক স্কুলের বঞ্চিত শিশুরা আমার জন্মমাসটিকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে উদযাপন করতে চেয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম সেই ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিতে এমনভাবে, যা সত্যিকারের পরিবর্তন আনে। তাই পাঁচ তারকা হোটেল নয়, আমি বেছে নিয়েছি এই মুকুট উৎসবকে শিশুদের মাঝে উদযাপন করতে-কারণ শিশুর মতো নির্মল হৃদয়ের চেয়ে সুন্দর জায়গা আর নেই।
তিনি আরও জানান, এই উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের পরদিন, “প্রকৃতি, শিশু ও ভালোবাসা” থিমে।
আয়োজনের অংশ হিসেবে হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মাসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক গল্পপাঠ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। আমাদের মিস আর্থ কুইনরা শুধু মডেল নন, তাঁরা রোল মডেল—সমাজসেবা, টেকসই জীবনধারা ও বৈশ্বিক বন্ধুত্বের অনুপ্রেরণা।
আমরা জাতিকে একত্র করছি, পরিবেশ রক্ষা করছি, এবং বিশ্বকে দেখাচ্ছি যে বাংলাদেশ বন্ধুত্ব, সমতা ও মর্যাদার যোগ্য,” বলেন মেঘনা আলম।
মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে কেবল বিনোদনের সীমায় আটকে রাখতে চায় না; বরং এটি সামাজিক সচেতনতা ও কূটনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
সংস্থাটি তিনটি প্রধান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (SDG) ওপর জোর দিচ্ছে:- জলবায়ু ব্যবস্থা (SDG 13), লিঙ্গ সমতা (SDG 5), অংশীদারিত্ব ও বৈশ্বিক সহযোগিতা (SDG 17)
প্রতি বছর এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো হয় বিশ্বের ছয়টি মহাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়।
মেঘনা আলম আরও জানান, মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এশিয়ার প্রথম SDG-কেন্দ্রিক নারী নেতৃত্ব ও জলবায়ু কূটনীতি প্ল্যাটফর্ম। নবনির্বাচিত মিস আর্থ বাংলাদেশ সুমাইয়া হারুনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে একজন ‘ইয়ুথ এনভয়’ হিসেবে, যিনি আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং সাংস্কৃতিক ও জলবায়ু কূটনীতির মাধ্যমে দেশের সফট পাওয়ার বৃদ্ধি করবেন।
বিআলো/এফএইচএস