মেহেরপুরের শীর্ষ ক্যাসিনো সম্রাট লিপু সাতক্ষীরায় আটক
হাসানুর রহমান হাসান, সাতক্ষীরা: দেশজুড়ে যখন অনলাইন জুয়া ও ভার্চুয়াল ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, ঠিক তখনই সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে মেহেরপুরের আলোচিত অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট মোরশেদুল আলম লিপু গাজী (২৮)। মধ্যরাতে পরিচালিত অভিযানে তার গ্রেপ্তারের খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সীমান্তজেলা মেহেরপুর থেকে শুরু করে সাতক্ষীরাজুড়ে।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাতক্ষীরার মন্টু মিয়ার বাগানবাড়িতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে জেলা ডিবি পুলিশ। আটক লিপু গাজী মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থানাধীন কেদারগঞ্জ ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মো. জিনারুল ইসলামের ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশজুড়ে বিস্তৃত একটি অনলাইন ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের মূল হোতা হিসেবে কাজ করছিলেন।
ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, লিপু গাজীর নেতৃত্বে পরিচালিত এই অনলাইন জুয়ার চক্রের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত বিদেশে পাচার হতো। এসব জুয়ার সাইট ও অ্যাপস মূলত রাশিয়া থেকে পরিচালিত হতো এবং স্থানীয় পর্যায়ে তাদের এজেন্টরা তরুণদের প্রলোভনে ফেলে এই নেটওয়ার্ক বিস্তার ঘটায়। মেহেরপুর শহর থেকে শুরু করে গাংনী ও মুজিবনগরের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এখন এ নেশা ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাইনুল ইসলাম একসময় সিরাজগঞ্জে তাঁতের কাজ করতেন। পরবর্তীতে এলাকায় ফিরে এসে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। তবে অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি হয়ে ওঠেন কোটিপতি। বর্তমানে তার কাছে রয়েছে দামী প্রাইভেট কার, একাধিক মোটরবাইক, স্ত্রীর নামে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার, এবং ব্যাংক হিসাবেও জমা রয়েছে কোটি টাকার উপরে অর্থ।
স্থানীয়রা জানায়, মাইনুলের পরিবার ছিল অতি সাধারণ। তার বাবা ছিলেন এক মৎস্যজীবী। অথচ ছেলে এখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এত অল্প সময়ে এত সম্পদ কোথা থেকে এলো? সবাই জানতো, সে অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে দ্রুত অর্থ উপার্জনের এই বিপজ্জনক পথে পা দিয়েছে।
চলতি বছরের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সন্তোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে মাইনুল ‘চশমা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। তবুও এলাকায় তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অর্থবিত্তের প্রভাব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
পুলিশের ধারণা, লিপু গাজী ও তার সহযোগীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অনলাইন জুয়ার এজেন্টদের মাধ্যমে বৃহৎ অর্থপাচার চক্র গড়ে তুলেছিল। এসব জুয়ার সাইটে হাজারো তরুণ-যুবক ভার্চুয়াল টোকেনের মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
পুলিশ বলছে, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরায় এই চক্রের আরও কয়েকজন সক্রিয় সদস্যের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিআলো/তুরাগ