রক্তাক্ত জুলাইয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে নারায়ণগঞ্জে উদ্বোধন হচ্ছে স্মৃতি স্তম্ভ
মনিরুল ইসলাম মনির: ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে নারায়ণগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়কে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাজীগঞ্জ এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে।
রবিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে নির্মাণস্থল পরিদর্শন করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি জানান, দেশের মানুষ যেন গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ভুলে না যায় সেই লক্ষ্যেই এই স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। আগামী ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের দিনে এখানে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন একাধিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা। অনুষ্ঠানে থাকবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
জেলা প্রশাসক বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভ হবে অবিস্মরণীয় নিদর্শন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের স্থাপত্য বিভাগ এর নকশা করেছে এবং উপদেষ্টা পরিষদ তা অনুমোদন করেছে।”
নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জানান, স্মৃতিস্তম্ভটির উচ্চতা ১৮ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার উচ্চারিত স্লোগানগুলো এর বিভিন্ন অংশে খোদাই করা হবে। “প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা হিসেবে সেই স্লোগানগুলোই আগামী প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে ঐতিহাসিক জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ,” বলেন তিনি।
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, স্মৃতিস্তম্ভ এলাকা সর্বদা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সুযোগ রাখা হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাবেদ আলম বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও ২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। একসাথে এত ছাত্রজনতার রক্তক্ষয়ী আত্মদানের উদাহরণ বিরল।” তিনি স্মৃতিস্তম্ভটিকে কালের সাক্ষী আখ্যা দিয়ে বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্মৃতি আমাদের দায়িত্বে বাঁচিয়ে রাখা হবে।”
জেলা প্রশাসন আশা করছে, এই স্মৃতিস্তম্ভ শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে থাকবে।
বিআলো/তুরাগ