রাজধানীতে এনসিপি নেত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, তদন্তে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ঝিগাতলার একটি নারী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নারী নেত্রী জান্নাতারা রুমির (৩০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও রাজনৈতিক সহকর্মীদের একাংশ এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্তসহ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
যেভাবে মরদেহ উদ্ধার
বৃহস্পতিবার সকালে হাজারীবাগ থানাধীন ঝিগাতলা পুরান কাঁচাবাজারসংলগ্ন একটি নারী হোস্টেলের পঞ্চম তলার একটি কক্ষ থেকে জান্নাতারা রুমির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, সকালে হোস্টেলের কাজের বুয়া একাধিকবার ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। পরে ভেতরে ঢুকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তাকে ঝুলতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ যা বলছে
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পুলিশ আরও জানায়, নিহতের কক্ষ থেকে বিষণ্নতা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে গলায় দাগ থাকলেও শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন
জান্নাতারা রুমির গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর এলাকায়। তিনি দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং উভয় ক্ষেত্রেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম স্বামীর ঘরে তার আট বছরের একটি মেয়ে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সন্তানরা বর্তমানে নওগাঁয় নিজ নিজ বাবার সঙ্গে থাকে।
নিহতের সাবেক স্বামী মো. বিপ্লব সরকার জানান, চার-পাঁচ মাস আগে তাদের ডিভোর্স হয় এবং এরপর কয়েক মাস ধরে তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না।
রাজনীতি ও কর্মজীবন
জান্নাতারা রুমি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মেডিকেল কলেজ থেকে নার্সিং পাস করেন। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করতেন। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের পর তিনি এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ধানমন্ডি থানা শাখার যুগ্ম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে আলোচনা
মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া তার সর্বশেষ স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে তিনি লেখেন, “ইয়া আল্লাহ, হাদি ভাইকে আমাদের খুব দরকার।” এর একদিন আগে দেওয়া আরেকটি পোস্টেও মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষা দেখা যায়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এনসিপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করেছেন, সাম্প্রতিক একটি রাজনৈতিক ঘটনার পর জান্নাতারা অনলাইনে সাইবার বুলিং ও হত্যার হুমকির শিকার ছিলেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “এই হুমকিগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।”
তবে পুলিশ জানিয়েছে, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে আইনগত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
দাফনের প্রস্তুতি
ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জান্নাতারা রুমির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে স্বজনেরা মরদেহ নওগাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।
বিআলো/শিলি



