• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    রাজধানীতে ছিন্নমূল মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই 

     dailybangla 
    01st Feb 2025 2:35 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    রাজধানী ঢাকা—আলোকিত সড়ক, ব্যস্ত রাস্তা, কর্পোরেট অফিস আর আধুনিকতার শহর। কিন্তু এই চমকানো নগরীর অলিগলিতে, ফুটপাতে আর রেলস্টেশনের পাশে বাস করে একদল মানুষ, যাদের জন্য জীবন মানে প্রতিদিনের এক অনিশ্চিত সংগ্রাম। তারা অসহায়, ছিন্নমূল, দিনমজুর—যারা আমাদের চারপাশে থেকেও যেন অদৃশ্য।

    ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা কমলাপুর রেলস্টেশন, গুলিস্তান, ফার্মগেট, কাওরান বাজার কিংবা সদরঘাটের ফুটপাতে সারাদিন দেখা মেলে ছিন্নমূল মানুষের। কেউ ভিক্ষা করে, কেউবা রাস্তার ধারে চায়ের দোকান বসিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। অনেক শিশু সকালেই নেমে পড়ে পলিথিন বা কাগজ কুড়াতে, কেউ আবার ঠেলাগাড়ি ঠেলে দিন পার করে। রাত নামলে এসব মানুষের থাকার জায়গা হয় সড়কের ধারে, বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চে, রেললাইনের পাশে কিংবা কোনো মার্কেটের সামনে।

    সাত বছরের মুন্নার গল্প হৃদয়বিদারক। জন্ম থেকেই সে পথশিশু। তার মা-ও ভিক্ষা করেন, কখনো বা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু মাসের শেষে আশ্রয় বলতে রেলস্টেশনের এক কোনা। ‘‘আমাদের জন্য কইওনো বাসা নাই?’’—এই প্রশ্নের উত্তর তার মা দিতে পারেন না।

    রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক—এরা কেউই নিশ্চিত আয়ের মানুষ নয়। একজন রিকশাচালক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে গড়ে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করেন। কিন্তু তার মধ্যে বেশিরভাগই চলে যায় রিকশার মালিককে ভাড়ায়। বাকি যা থাকে, তা দিয়েই চালাতে হয় তার সংসারের খরচ।

    সিদ্দিক মিয়া, ৫৫ বছরের এক রিকশাচালক, বললেন, ‘‘আগে দিনে ৮০০-১০০০ টাকা ইনকাম হতো, এখন সবকিছুর দাম বেশি, মানুষও আগের মতো রিকশায় চড়ে না। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে গেছে।’’

    এদিকে গৃহকর্মী, ফেরিওয়ালা, নির্মাণশ্রমিকরা দিনশেষে যে সামান্য উপার্জন করেন, তা দিয়ে খাবার কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসা, শিশুদের পড়াশোনা কিংবা ভালো বাসস্থানের স্বপ্ন তাদের কাছে বিলাসিতা।

    ফুটপাতে বসবাস করা নারীদের জন্য জীবন আরও কঠিন। নিরাপত্তাহীনতা, অপমান, নির্যাতন আর অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে যেসব নারী একা সন্তান লালন-পালন করেন, তাদের জন্য প্রতিটি রাতই আতঙ্কের।

    রহিমা বেগমের গল্পটিও এমনই। দুই সন্তান নিয়ে কমলাপুর স্টেশনের পাশে থাকেন। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে, অন্য কোথাও নতুন সংসার গড়েছে। রহিমা মানুষের বাসায় কাজ করে যা পান, তা দিয়েই সন্তানদের খাবার জোটান। কিন্তু ইজ্জতের নিরাপত্তার অভাবে প্রতিদিন তাকে শঙ্কিত করে তোলে।

    ঢাকার অসহায় মানুষদের জীবন শুধু কষ্টের গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা। সরকার, সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকরা যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে অন্তত এই মানুষগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, খাবার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা সম্ভব।

    এই ছিন্নমূল মানুষেরা কি কখনো ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে? নাকি তারা সারাজীবন শহরের ব্যস্ত ফুটপাতে, স্টেশনের ধারে জীবনযুদ্ধে হারিয়ে যাবে?—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই হয়তো আমাদের আরও সংবেদনশীল হতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে, মানবিক হতে হবে। আমাদের একটু সহায়তা, একটুখানি ভালোবাসা তাদেরকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি রহম করুন।

    রাকিব হোসেন মিলন (লেখক ও সাংবাদিক)

    বিআলো/তুরাগ

     

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031