• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    “রিপন ভিডিও” বানিয়ে অন্যরা খাচ্ছে পেইজের টাকা, মিস্ত্রির কাজেই দিন কাটে রিপনের 

     dailybangla 
    17th Oct 2025 6:16 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    ২০ লাখ ফলোয়ারের পেইজ, কিন্তু নিজের হাতে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। অন্যরা খাচ্ছে ইনকাম, রিপন এখনো মিস্ত্রির কাজ করেন!

    নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামের তরুণ রিপন মিয়া—যাকে একসময় সবাই চিনতো “রিপন ভিডিও” নামে। সরল উচ্চারণে হাস্যরস মিশিয়ে ছন্দ বলার এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফেসবুকে ছন্দে ছন্দে হাসি ছড়ানো সেই ভাইরাল তরুণ রিপন মিয়া—আজ নিজের পেইজেই কর্মচারী। যাকে সারা দেশ চিনতো “রিপন ভিডিও” নামে, সেই রিপনের নামেই চলছে কোটি টাকার পেইজ, অথচ ইনকামের খবরই জানেন না তিনি!

    রিপনের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী জানান, রিপনের প্রথম উত্থানের পেছনে তিনিই ছিলেন। শুরুতে রিপন ছিল অশিক্ষিত ও সরলমনা। যখন সে লাইভে আসতো, তিনি কমেন্ট পড়ে দিতেন, আর রিপন তার জবাব দিতো। ভাইরাল হওয়া সব ছন্দই তিনিই লিখে দিয়েছিলেন রিপনকে। সেখান থেকেই রিপনের নাম হয় “রিপন ভিডিও”।

    প্রতিবেশীর তত্ত্বাবধানে রিপনের নামে খোলা হয় একটি ফেসবুক পেইজ—‘রিপন ভিডিও’। অল্প সময়ের মধ্যেই সেই পেইজে যুক্ত হয় ২০ লাখেরও বেশি অনুসারী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মনিটাইজেশন পাওয়ার আগেই পেইজটি পরিচালনাকারীর আইডি ডিজেবল হয়ে যায়। ফলে পেইজ ও জনপ্রিয়তা হারিয়ে নতুন করে শুরু করা সম্ভব হয়নি।

    এরপর থেকে রিপন অনেকটা হারিয়ে যায়। যদিও ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করতে সে থামেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে। এখন তার একাধিক ফেসবুক পেইজ আছে, যেগুলোতে আপলোড করা ভিডিও মিলিয়ন ভিউ পায়। বিজ্ঞাপন, সিনেমার প্রচারণা ও স্পন্সরড কনটেন্টেও কাজ করছে সে।

    কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এসব পেইজের কোনোটিই এখন রিপনের নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরল ও অশিক্ষিত রিপনকে ব্যবহার করে তার নামে তৈরি করা পেইজগুলো চালাচ্ছে একাধিক ব্যক্তি। পেইজের ইনকাম তারা নিজেরা তুলে নিচ্ছে, আর রিপনকে মাস শেষে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখা হচ্ছে।

    রিপন নিজেও স্বীকার করেছে যে, পেইজ অন্য কেউ চালায়। তবে কে চালায়, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চায়নি। সে শুধু জানে, “আমি ভিডিও করি, তারা পোস্ট দেয়।” অথচ তার নামে চলা পেইজগুলো থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

    রিপনের পেইজের প্রকৃত ইনকাম যদি সে পেত, তাহলে আজ হয়তো তাকে অন্যের বাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করতে হতো না। অথচ আজও সে মজুরির কাজ করে জীবিকা চালায়। আরও করুণ বিষয় হলো—তার মা-বাবাও এখনো অন্যের বাড়িতে গিয়ে কাজ করে খেয়ে বাঁচেন।

    সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে—রিপন নাকি তার মা-বাবাকে দেখাশোনা করে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তার আয় এত সীমিত যে সে নিজের সংসারই টেনে নিতে পারে না। তাই তার মা-বাবার অভিযোগও এক অর্থে সত্যি, আবার দোষারোপও নয়।

    বেশ কয়েকটি পেইজ থেকে রিপনের নামে নানা রকম পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে পরিবারের সদস্যদের অনুমতি ছাড়া কয়েকজন টিভি সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করলে, রিপনের পেইজে একটি ক্ষোভভরা স্টেটাস প্রকাশিত হয়। কিন্তু যারা রিপনকে চেনেন তারা বলেন, “এই স্টেটাস রিপনের নিজের লেখা নয়। সে লিখতে পারে না, এত সুন্দর ভাষা ব্যবহারও তার পক্ষে সম্ভব নয়।”

    রিপনের পরিচিতজনরা আরও জানান, যারা তার পেইজ চালায়, তারাই এসব স্টেটাস লেখে। তারা চায় না মিডিয়া বা সাধারণ মানুষ জানুক যে রিপন নিজে তার ফেসবুক পেইজ চালায় না। কারণ, তা প্রকাশ পেলে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ কারণে তারা রিপনকেও এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে এখন রিপন নিজেও মুখ খুলতে ভয় পায়।

    রিপনের ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়েও আছে বিভ্রান্তি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রিপন বলেন, সে বিয়ে করেনি। কিন্তু স্থানীয় সূত্রের দাবি, রিপনের স্ত্রী ও সন্তানসহ আলাদা সংসার রয়েছে। শুধু জনপ্রিয়তা ধরে রাখার আশায় বিষয়টি আড়াল করে রাখা হয়েছে।

    সবশেষে যারা রিপনের সাফল্যের গল্পের পেছনে আছেন, তারা চান রিপন তার প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাক। তার পেইজের প্রকৃত ইনকাম যেন সরাসরি তার হাতে আসে, এবং তার মা-বাবা যেন ছেলের উপার্জনের টাকায় ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।

    দেশের বড় বড় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশে প্রতিবেশীর আহ্বান—“রিপনের ভাইরাল ছন্দে মানুষ হাসে, কিন্তু তার নিজের জীবনে এখনো অন্ধকার। আমরা চাই, সে যেন তার ন্যায্য প্রাপ্য পায়। রিপন মিয়া যেন আর কারও হাতে খেলনা না থাকে।”

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    October 2025
    M T W T F S S
     12345
    6789101112
    13141516171819
    20212223242526
    2728293031