রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ৭ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় ও টেকসইভাবে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাব পেশ করেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কেবল কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না। এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও।
প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজ আবাসভূমিতে ফিরে যেতে না পারেন, ততদিন পর্যন্ত এ সংকটকে বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখতে হবে।
এর আগে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সাত দফা প্রস্তাব-
১. দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য একটি কার্যকর রোডম্যাপ প্রণয়ন। ২. ২০২৫-২৬ সালের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার অর্থ ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা। ৩. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া। ৪. মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা। ৫. আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা এবং মানবপাচার, মাদকপাচারসহ সীমান্তবর্তী অপরাধ দমন। ৬. জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ। ৭. আইসিজে ও আইসিসি-তে চলমান জবাবদিহি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক), পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজুও বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রতিবছর শিবিরগুলোতে প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক জন্ম নিচ্ছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে রয়ে গেছে মাত্র পাঁচ লাখেরও কম রোহিঙ্গা। এই পরিস্থিতিকে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি, সম্পদ, পরিবেশ ও শাসনব্যবস্থার ওপর বিরাট চাপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মানবজাতির সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্য সত্ত্বেও মানবিক বিবেচনায় সীমান্ত উন্মুক্ত করেছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি।
তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আগামী বুধবার (২৭ আগস্ট) পর্যন্ত চলবে।
বিআলো/এফএইচএস