লন্ডনে বাংলাদেশ বিমানের ক্রু তৈফুরকে শরণার্থীর হামলা, হাসপাতালে ভর্তি
অনিরাপদ পরিবেশে কেবিন ক্রুরা আতঙ্কে, ব্যক্তিগত স্বার্থে হোটেল পরিবর্তন হচ্ছে না—অভিযোগ ক্রুদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: লন্ডনে দায়িত্ব পালনকালে অপ্রত্যাশিত ও ভয়াবহ এক হামলার শিকার হয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডন ফ্লাইটের ফ্লাইট পার্সার তৈফুর রহমান খান। শরণার্থীর হঠাৎ আক্রমণে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পেটে কিল-ঘুষি খেয়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। বর্তমানে তিনি গুরুতর অবস্থায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—বিমানের কেবিন ক্রুরা বিদেশে আসলে কতটা নিরাপদ?
ঘটনাস্থলের চিত্র
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে লন্ডনের হেস্টন হাইড হোটেলে অবস্থানকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হোটেলের কক্ষ থেকে বেরিয়ে সামনে বসেছিলেন তৈফুর। এমন সময় পেছন থেকে এক নেশাগ্রস্ত শরণার্থী মোটা লাঠি দিয়ে তাঁকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন। পরে অমানবিকভাবে পেটে কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে আরও বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়।
আইনগত ব্যবস্থা
খবর পেয়ে দ্রুত লন্ডন পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীকে আটক করে এবং মামলা দায়ের করে। তৈফুর প্রথমে ই-মেইলের মাধ্যমে বিমান কর্তৃপক্ষকে ঘটনার বিস্তারিত জানান। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হেস্টোন হাইড হোটেল নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ
বিমানের কেবিন ক্রুরা অভিযোগ করেছেন, লন্ডনের হেস্টন হাইড হোটেল বহুদিন ধরেই অনিরাপদ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ শরণার্থীদের দখলে থাকায় সেখানে প্রতিনিয়ত গাঁজা সেবন, তাস খেলা, মদ্যপান, রাতভর হট্টগোল হয়। হাউসকিপিংয়ের মান এতটাই খারাপ যে, কক্ষের ভেতর তেলাপোকার উপদ্রব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাধিক জ্যেষ্ঠ ক্রু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “লন্ডনে আমরা প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি। বিশেষ করে নারী ক্রুরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। যদি দ্রুত হোটেল পরিবর্তন না হয়, তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা—এমনকি ধর্ষণের মতো ভয়ংকর ঘটনাও ঘটতে পারে।”
ব্যক্তিগত স্বার্থে হোটেল পরিবর্তন হচ্ছে না—অভিযোগ ক্রুদের
ক্রুরা অভিযোগ করে বলেন, অন্য আন্তর্জাতিক গন্তব্যে (জেদ্দা, রিয়াদ, দোহা, রোম, টরন্টো ইত্যাদি) বিমানের সব ক্রু ভালো মানের হোটেলে অবস্থান করলেও লন্ডনে তাঁদের নিম্নমানের হেস্টন হাইড হোটেলেই থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, কয়েকজন স্থানীয় এজেন্টের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণেই এই হোটেল পরিবর্তন করা হচ্ছে না।
তাঁরা আরও জানান, করোনা মহামারির পর থেকে হোটেলের সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, স্ট্রিম ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। ফলে হোটেলটি কার্যত বসবাস ও অবস্থানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম জানান, “গতকাল আকস্মিকভাবে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিমানের লন্ডন কান্ট্রি ম্যানেজার হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে তারা বিস্তারিত ঘটনা ই-মেইল করতে বলে। ইতিমধ্যে লন্ডন কান্ট্রি ম্যানেজার পুরো ঘটনা উল্লেখ করে হোটেল কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল করেছেন। তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। পাশাপাশি হোটেল কর্তৃপক্ষ ক্রুদের হেস্টন হাইড হোটেলের পরিবর্তে একই কোম্পানির অন্য হোটেলে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েছে।”
বিআলো/তুরাগ