শব্দ দূষণ: মানব স্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকি -হারুন অর রশিদ
শব্দ দূষণ বা অতিরিক্ত ও অবাঞ্ছিত শব্দ মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের মানও ক্ষুণ্ন করে।
শব্দ সাধারণত যানবাহন, শিল্পকর্ম, বিমান ও রেলপথ, কলকারখানা, নির্মাণকাজ ও লাউড স্পিকারের মতো উৎস থেকে উৎপন্ন হয়। শব্দের মাত্রা ডেসিবেল (ডিবি) এককে পরিমাপ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ৪৫ ডিবি মাত্রার শব্দ মানুষকে ঘুমাতে দেয় না, ৮৫ ডিবি শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ১২০ ডিবি হলে কানে ব্যথা শুরু হয়।
ঢাকার ব্যস্ত সড়কে প্রতিনিয়ত তৈরি হওয়া শব্দের মাত্রা ৬০ থেকে ৯৫ ডিবি পর্যন্ত পৌঁছায়। লাউড স্পিকার, কলকারখানা, মেলা-উৎসব, ট্রাক-বাস এবং স্কুটারের শব্দ শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ১০০ ডিবি বা তার অধিক শব্দ শুনলে তারা স্থায়ী বধিরতার শিকার হতে পারে।
শব্দ দূষণ শুধু শ্রবণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে না, এটি মানসিক চাপ, খিটখিটে মেজাজ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ মাথ্যাব্যথা ও পেপটিক আলসারের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী গর্ভবতীরা অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি বিকৃত বা অপরিণত শিশু জন্ম দেয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, বাংলাদেশের আবাসিক এলাকায় শব্দের নিরাপদ মাত্রা দিবাকালে ৫০ ডিবি এবং রাতের বেলায় ৪০ ডিবি। কিন্তু ঢাকা শহরের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা প্রায়ই ৭০-৮৩ ডিবি পর্যন্ত পৌঁছায়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, শহরের জনবহুল এলাকায় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ না করলে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্য, মনোযোগ ও মানসিক ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।
লেখক-হারুন অর রশিদ
বিআলো/এফএইচএস