• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    শাটডাউন কর্মসূচিতে অচল এনবিআর, দিনে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি 

     dailybangla 
    29th Jun 2025 7:31 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    রতন বালো: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) শাটডাউন কর্মসূচি গতকালও অব্যাহত থাকে। এই কর্মসূচীর ফলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমন ধারা চলতে থাকলে বাজারের তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমনটিই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

    গত শনিবার এনবিআরসহ দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয়ে দিনভর পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হলে ব্যবসায়ীদের ভিতরে এই উদ্বেগ ভর করে। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আজ রবিবার রাজধানীসহ সারা দেশে শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। চলমান শাটডাউন কর্মসূচির ফলে দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয়ে কোনো কাজ হয়নি।

    বিক্ষুব্ধরা আজ (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনের সামনে জড়ো হন। এসময় তারা ফটকের সামনে রাস্তায় বসে পড়েন। তবে গতদিনের তুলনায় কম উপস্থিতি দেখা গেছে। আগের দিন কড়াকড়ি থাকলেও গতকাল প্রধান ফটকে প্রবেশেও শিথিলতা দেখা গেছে। এসময় নিজ নিজ পরিচয়পত্র দেখিয়ে চাকুরিরত কর্মকর্তারা ভবনে প্রবেশ করেন।

    জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচির ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয়। চার দিনের কলম-ধর্মঘটের পর গত শনিবার কর্মকর্তারা করদাতাদের পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন। গতকাল ছিল কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন।

    বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও ‘প্রতিহিংসামূলক বদলি’ বন্ধের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছেন। তবে, চলমান কর্মসূচি থেকে কেবল আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন।

    সকাল থেকে সারাদেশের এনবিআর কর্মকর্তারা সেখানে জড়ো হতে থাকেন।এ সময় ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদর দপ্তরের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন দেখা গেছে।

    এদিকে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের গত শনিবারের মতো গতকালও টহল দিতে দেখা গেছে। যদিও তাদের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কম ছিল। গত শনিবার কেউ ভেতরে প্রবেশ না করলেও গতকাল প্রধান ফটকের ভেতরের বটতলায় কর্মকর্তাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

    এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। তাঁদের অফিস সময় সকাল ৯টায়। এখনো কেউ কেউ আসছেন। পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশ করতে দিচ্ছি।

    এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা আন্দোলনে যোগ দেন। গত শনিবারও বিভিন্ন শুল্ক-কর কার্যালয় থেকে মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কাজ হয়নি। এসব স্টেশন থেকে শুল্ক-কর আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

    এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ গত শনিবার দুপুরে ঘোষণা দেয়, আজও( রবিবার) ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি চলবে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তাঁদের শর্ত হলো, আলোচনার আগে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। অভিযোগ, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতের চলমান সংস্কারে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপেক্ষা করছেন। উল্টো আন্দোলনকারীদের দমন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

    আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেটি বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে তারা সরকারকে আল্টিমেটাম দেন। সরকার সেই দাবি উপেক্ষা করে ফলে বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মীরা।

    যদিও চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর কাজে যোগ দিলেও রাজস্ব খাতের সংস্কারে এনবিআর কর্মকর্তাদের উপেক্ষা ও অসহযোগিতা করার অভিযোগে আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে অটল থাকেন। তারা এই দাবিতে চেয়ারম্যানকে সংস্থার কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী পাহারায় এনবিআর চেয়ারম্যান দপ্তরে আসা-যাওয়া করেন।

    এ ছাড়াও আন্দোলন দমাতে কর্মকর্তাদের হঠাৎ করে বদলির অভিযোগও আনা হয় এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তাঁদের শর্ত হলো, আলোচনার আগে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। বিক্ষুব্ধরা জানান, এই চেয়ারম্যান সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন যার হাতে জুলাই চেতনার শহিদদের রক্তের দাগ রয়েছে।

    চেয়ারম্যানের অপসারন নিয়ে বিবৃতি:
    চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শার্টডাউন’ কর্মসূচি পালন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

    গতকাল সকালে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। কর্মসূচী নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

    বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, সংকট সমাধানে এনবিআরের কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে আজ (গতকাল)বিকালে আমরা অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে আলোচনায় বসতে পারি।

    এর আগে, গত শনিবার এক বিবৃতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি আজও (রবিবার) চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।

    এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং এতে কোনো সুফল আসবে না বলে ব্যবসায়ীদের একটি বিবৃতি নিয়েও সে সময় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

    এ বিষয়ে ঐক্য পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ওই বিবৃতিতে (ব্যবসায়ীদের) কেন একটি স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী হয়ে ওঠা আমলাকে অপসারণ অনুচিত বলে মনে করা হচ্ছেতা পরিষ্কার করা হয়নি।

    তারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের অপসারণ কেন প্রয়োজন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তারা ইতোমধ্যেই দিয়েছেন। তার অপসারণ ছাড়া রাজস্ব খাতের ‘সম্পূর্ণ, বাস্তবসম্মত, টেকসই ও প্রকৃত’ সংস্কার সম্ভব নয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা আশা করি সরকার, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং জনগণ আমাদের এই ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করবেন।

    জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থার কারণে দেশের ব্যবসায় দৈনিক প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। দ্রুত সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তারা।

    গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্পখাতের নেতারা জানান, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতি কর্মসূচি গত ১৪ মে থেকে শুরু হলেও আজ (শনিবার) থেকে তা পূর্ণাঙ্গ অচলাবস্থায় রূপ নিয়েছে, যা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

    এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের বিরোধীতা করে নেতারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। তবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কেউ শ্রমিক ইউনিয়নের মতো আন্দোলনে নামতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন তারা।

    ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তারা স্পষ্ট করেছেন, কোনো অবস্থাতেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এনবিআরের কলম বিরতি কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।ব্যবসায়ীরা সংকট নিরসনে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সচল রাখতে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে।

    ব্যবসায়ী নেতারা এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আলোচনায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তারা।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031