• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    শাহী জামা মসজিদ নিয়ে বিজেপির কৌশল ফাঁস 

     dailybangla 
    25th Nov 2024 5:28 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ও সম্ভলের শাহী জামা মসজিদ। ভারতে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে মুঘল যুগের একটি প্রাচীন মসজিদে ‘সার্ভে’ বা সমীক্ষা করানোর নির্দেশকে ঘিরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের মধ্যে রোববার দফায় দফায় তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।

    সহিংসতায় আহত হয়েছেন কম করে ৩০ জন পুলিশের সদস্য। ঘটনার পর গোটা এলাকায় তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শহরের যে মসজিদটিকে ঘিরে এই বিরোধ, সেটি ‘শাহী জামা মসজিদ’ নামে পরিচিত। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলির দাবি, প্রাচীন একটি হিন্দু মন্দির ভেঙেই এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল, ওই ভবনের স্থাপত্যে এখনও যার প্রমাণ রয়েছে।

    এই দাবিকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসিলম গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আদালতে আইনি লড়াইও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি আদালত ওই মসজিদ প্রাঙ্গণে সার্ভে করানোর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। ওই মসজিদ ভবনটিতে আগে কোনো হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কি না, সেটা যাচাই করে দেখার জন্যই ওই সার্ভের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

    সম্ভালের পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, রোববার সকালে প্রশাসনের একজন ‘অ্যাডভোকেট কমিশনারে’র নেতৃত্বে একটি সার্ভে টিম মসজিদে তাদের কাজ শুরু করতেই বাইরে বিরাট জনতা জড়ো হয়ে যায় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সহিংসতা শুরু হয়ে যায়।

    পুলিশ বলছে, প্রায় এক হাজার মানুষ তখন মসজিদের বাইরে ছিল – যারা তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দিতে থাকে। এদিকে সম্ভালের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদও চড়তে শুরু করেছে। বিরোধী সমাজবাদী পার্টির প্রভাবশালী নেতা অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছেন, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার সম্ভলে কৌশলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোতে ঘটা ‘নির্বাচনি অনিয়ম’ থেকে দৃষ্টি ঘোরানো যায়!

    রোববার বিকেলে তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে টুইট করেছেন, সম্ভলে খুব গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। এদিন সকালে একটি সার্ভে টিমকে ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে পাঠানো হয়েছিল যাতে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ভেস্তে দেওয়া যায়।

    অখিলেশ যাদব মন্তব্য করেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, যাতে নির্বাচনের ইস্যু নিয়ে কোনও বিতর্ক হতেই না পারে। সমাজবাদী পার্টির এমিপি জিয়াউর রহমান বর্ক-ও জামা মসজিদে এই সার্ভের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

    তিনি বলছেন, সম্ভলের জামা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক উপাসনাস্থল। দেশের সুপ্রিম কোর্টই বলেছে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় (অযোধ্যা ছাড়া) প্রতিটি ধর্মীয় স্থল যেভাবে ছিল, সেভাবেই রক্ষিত হবে। সুতরাং এর পরও ওই মসজিদে সার্ভের প্রয়োজনটা কী, সেই প্রশ্নই তুলেছেন বর্ক।

    রাজ্যের শাসক দল বিজেপি অবশ্য বলছে, প্রশাসন শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশ পালন করছে, এর মধ্যে অন্য কোনো রাজনীতি নেই। ঘটনাস্থলে মোতায়েন পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ও ইটপাটকেল ছোঁড়া হতে থাকে। ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত জনতা রাস্তায় গোটাদশেক গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ বাহিনীও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে ও লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীও জখম হন।

    মোরাদাবাদের ডিভিশনাল কমিশনার অঞ্জনেয় কুমার সিংকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নিহত তিনজনের নাম নাঈম, বিলাল ও নোমান। যে পুলিশকর্মীরা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পুলিশ সুপারের ‘গানার’ বা বন্দুকধারী রক্ষীও আছেন। এর আগে এদিন সকাল সাড়ে সাতটায় মসজিদ চত্বরে সার্ভের কাজ শুরু হয়। মুঘল আমলে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির ভেঙে এই জামা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এবং এখন তা হিন্দুদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে -এই দাবি নিয়ে একদল আবেদনকারী আদালতের শরণাপন্ন হলে এই সার্ভের নির্দেশ দেওয়া হয়।

    ওই আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, ‘বাবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরী’র মতো ঐতিহাসিক গ্রন্থেই প্রমাণ আছে যে ১৫২৯ সালে মুঘল বাদশাহ বাবর সম্ভলে হিন্দু মন্দির ভেঙে ওই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ‘ঐতিহাসিক সত্য’টি উদ্ঘাটন করার জন্যই শাহী জামা মসজিদে সার্ভে চালানো প্রয়োজন বলে তারা দাবি করে আসছিলেন।

    অন্যদিকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও সার্ভের বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, ভারতের ধর্মীয় উপাসনালয় আইন ১৯৯১ অনুসারে দেশের স্বাধীনতার সময় কোনো মন্দির, মসজিদ বা গীর্জার চরিত্র যা ছিল তা বদলানো যায় না – সুতরাং সম্ভালের জামা মসজিদেও এই ধরনের হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ
    অপ্রয়োজনীয়। তাছাড়া মসজিদে এভাবে ‘সার্ভে’ চালানো হলে তা এলাকায় অযথা উত্তেজনা ছড়াবে বলেও তারা যুক্তি দিচ্ছিলেন।

    গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আদালতের নির্দেশে ওই মসজিদে যখন প্রথম দফার সার্ভে চালানো হয়েছিল, সে দিনই সম্ভলে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। তবে এদিন (রোববার) সহিংসতার মাত্রা ছিল অনেক বেশি ব্যাপক।

    সম্ভালের পুলিশ সুপার কৃষ্ণকুমার বিশনোই রোববার সন্ধ্যায় জানান, ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই মৃদু বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছে। সহিংসতায় যারা যুক্ত ছিল তাদের আমরা চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।

    ইতিমধ্যে মোরাদাবাদ ডিভিশনের পুলিশ প্রধান অঞ্জনেয় কুমার সিং জানিয়েছেন, এই হামলায় জড়িত থাকার কারণে তিনজন নারী-সহ মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাইরে এই সহিংসতা সত্ত্বেও মসজিদের ‘সার্ভে’ অবশ্য পরিকল্পনামাফিক সম্পন্ন হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।

    মামলাকারীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট বিষ্ণুশঙ্কর জৈন জানিয়েছেন, সার্ভে টিম পুরো সাইটের বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে। আদালতের নির্দেশিকা অনুসারে ভিডিওগ্রাফি ও ফোটোগ্রাফিও করা হয়েছে। এখন এই সার্ভে রিপোর্ট আগামী ২৯ নভেম্বর আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে কথা রয়েছে।

    বিআলো/শিলি

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930