• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    শাহ রফিউদ্দীন মুহাদ্দিস দেহলভী (র.)’র জীবন পরিক্রমা: কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী 

     dailybangla 
    30th Apr 2025 9:00 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    ভারতবর্ষে সিহাহ সিত্তাহ হাদিসের সনদ প্রবর্তক; শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভীর দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি ইরাদতের দ্বিতীয় পুত্র শাহ রফিউদ্দীন দেহলভী একাধারে ছিলেন, শায়খুল মাশায়েখ, শায়খুল মুদাররিসিন, শায়খুত তরিক্বত, ফকিহুল আজ’ম ওয়াল আরব, ছাহিবুল কাশ্ফে ওয়াল কারামত, আবেদে রব্বানি। তিনি পিতা এবং বড় ভাইয়ের নিকট কুরআন, হাদিস, ফিকাহ ও দর্শন শাস্ত্রের পূর্ণ জ্ঞানার্জন হাসিল করে পিতামহের প্রতিষ্ঠিত ‘রহিমিয়াহ মাদরাসা’-ই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যয়ন, শিক্ষকতা, ফতোয়া প্রদান, ওয়াজ-নসিহত, তরিক্বতের তালিম ও তরবিয়ত প্রদান, রচনা, ইবাদত-বান্দেগি ও হেদায়াত কার্য পরিচালনা করাই ছিল তার কাজ। তিনি সমকালের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, দার্শনিক, উসূলবিদ হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। বিশ বছর বয়সে জ্ঞান-প্রজ্ঞা, ফাতোয়া প্রদান ও অধ্যাপনায় স্বকীয়তা ও খ্যাতি লাভ করেন। পিতার একান্ত খলিফা ও মামাতো ভাই মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আশেক ইবনে উবাইদুল্লাহ ফুলতী (র) থেকে তিনি তরিক্বতের ফায়দা হাসিল করেন। খান্দানের অন্যান্য বুযুর্গানের ন্যায় তার মেহমানখানায় সর্বদা মেহমান ও মুসাফির প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করতেন। এছাড়া এতিম, মিসকিন, অভাবীদের জন্য তার দান-সদকা অবারিত ছিল। পঞ্চান্ন বছর বয়সে শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী নানা যন্ত্রণাদায়ক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়লে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। এ কারণে লেখালেখির দায়িত্বভার দুই ভাই শাহ রফিউদ্দীন ও শাহ আবদুল কাদির (র)-এর ওপর ন্যস্ত করেছিলেন। একদিকে তিনি মাদরাসার দায়িত্ব পালন করতেন; অন্যদিকে শাহ আবদুল আজিজ দেহলভীর রচনা, প্রকাশনা, ফতোয়া প্রদান, তরিক্বতের প্রচার-প্রসার, ইলমি দরস ও তালিম-তরবিয়াত প্রদানসহ নানা ব্যস্ততায় সময় কাটাতেন, এজন্য গ্রন্থ রচনায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। তার কালজয়ী কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ‘ফাতহুর রহমান ফি তরজমাতুল কোরআন’ এর উর্দু অনুবাদ (১২০০ হিজরী)। গ্রন্থটি উপমহাদেশে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। গ্রন্থটি মূলত পবিত্র কুরআন মাজিদের ফারসি অনুবাদ। ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসি ভাষায় সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিমের ফারসি অনুবাদ করেছিলেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী। শাহ আবদুল আজীজ দেহলভী (র)-শায়খ আহমদ বিন মুহাম্মদ শারওয়ানকে শাহ রফিউদ্দীন (র)-সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘এখন প্রিয় ভাই ও সময়ের সুজনের যুগ। যিনি সম্পর্কে আমার সহোদর। শাস্ত্রীয় জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও সাহিত্যে (মানুষ আমার সঙ্গে যেসবের সম্বন্ধ করে) আমার অংশীদার। সে বয়সে আমার থেকে সামান্য ছোট। কিন্তু জ্ঞান-প্রজ্ঞায় আমার সমান। আল্লাহ তা’আলা নিজ মেহেরবানীতে তার লালন-পালন আমার হাতে। আর তার পূর্ণাঙ্গতার মাধ্যম আমাকে বানিয়ে অনুগ্রহ করেছেন আমার ওপর। সে কয়েকদিনের সফর থেকে ফিরে এসে আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত তবে অতি মূল্যবান পুস্তিকা উপহার দিয়েছে। সেটি এমন তত্ত্ব-উপাত্তে ভরা, যাতে সে অদ্বিতীয়। তার পূর্বে সেগুলো কেউ লিখেনি। তার এই স্বকীয়তা আয়াতে নূরের তাফসীর ও তাতে সুপ্ত মর্মগুলোর প্রকাশ্য উন্মোচন। আমি পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলছি, এ অধ্যায়ে তার বিবরণগুলো এমনই বিস্ময়কর, যার মাধ্যমে সে বাণীর মূলবস্তু প্রকাশ করে দিয়েছে। আলোময় করে দিয়েছে সমূহ আত্মার প্রদীপ। নিজের স্বকীয় রচনাশৈলীতে ভাগ্যবানদের করেছে প্রাণবন্ত।’ তার রচনাবলি : ১. আলামতে কিয়ামত, ২. দাফউল বাতেল, ৩. মুকাদ্দামাতুল ইলম, ৪. কিতাবুত্তাকীল, ৫. আস্রারুল মহব্বত, ৬. রিসালায়ে শাক্কুল কামার, ৭. রেসালায়ে রাহে-নাজাত, ৮. তাহকীকে আলওয়ান, ৯. বুরহানে তামানু, ১০. আকদে আনামিল, ১১. আরবাইনে কাফফাতের শরাহ প্রভৃতি ও মুফীদ কিতাব। শায়খ মুহসিন ইবনে ইয়াহইয়া তারহতী তার একটি গ্রন্থে লিখেন, ‘সেসব প্রচলিত শাস্ত্র বিদ্যা ছাড়া শাহ রফিউদ্দীন সাহেবের প্রাথমিক জ্ঞান-বিদ্যায়ও পরিপূর্ণ দক্ষতা ছিল, যা তার মতো অনেক কম বিদ্বানের দখলে থাকে। তার রচনাবলি খুবই উন্নত ও মূল্যবান। আমি তার কয়েকটি কিতাব পড়ে দেখেছি। তাতে হযরতের জ্ঞানগত ও শাস্ত্রীয় ভাষায় এমন তথ্য-উপাত্ত দেখতে পেয়েছি, যে রকম সূক্ষ¥ জ্ঞান খুব কমই হয়ে থাকে। অল্প শব্দে তিনি অনেক বিষয় একত্রিত করে দিয়েছেন। যাতে তার জ্ঞানের গভীরতা ও সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার ধারণা হয়। তার রচিত ‘দাফউল বাতেল’ গ্রন্থটি তাত্ত্বিক কিছু কঠিন বিষয়ের উপর লিখিত। শাস্ত্রীয় পণ্ডিতগণ যার প্রশংসা করেছেন। তার আরো একটি সংক্ষিপ্ত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পুস্তিকা রয়েছে। যাতে তিনি প্রত্যেক বিষয়ে মহব্বতের কার্যকারিতা দেখিয়েছেন ও তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর নাম ‘আসরারুল মুহাব্বত’। এমন কম লোকই পাওয়া যাবে, যারা এ বিষয়ের উপর অভিমত প্রকাশ করেছেন। আমার ধারণামতে এ বিষয়ের উপর তার পূর্বে কেবল দুজন দার্শনিক আবু নছর ফারাবী ও বু আলী ইবনে সীনা কলম ধরেছেন। যেমনটি জানা যায় নাসীরুদ্দীন তুসীর কোনো কোনো গ্রন্থ থেকে।’ শায়খ মুহসিন-শাহ রফিউদ্দীনের উল্লেখিত কিতাবাদি ছাড়াও তার আরো বিভিন্ন কিতাব রয়েছে। তন্মধ্যে ছন্দ-জ্ঞানের উপর একটি পুস্তিকা, মানতিকসহ সাধারণ নানা বিষয়েও তার পুস্তিকা রয়েছে। রিসালায়ে মীর যাহেদের উপর টাকাও লিখেছেন। মৌলবী মূসা, মৌলবী মাখসূসুল্লাহ্, মৌলবী ঈসা ও মৌলবী হাসানুয্যামান চার পুত্র রেখে তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। সন্তানদের মধ্যে জ্ঞানে, আধ্যাত্মিকতায় সর্বাধিক মশহুর ছিলেন মৌলবী মাখসূসুল্লাহ।

    লেখক: কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী

    (কলামিস্ট ও ব্যাংকার)

    বিআলো/তুরাগ

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031