শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন চলছে
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচার নিশ্চিত ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চলছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পশ্চিম পাশে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০ অক্টোবর পোষ্য কোটা পুনর্বহাল নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর রেশ ধরেই এই লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে ক্যাম্পাস। বাসায় চলে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, প্রশাসন ভবনের বেশিরভাগ দপ্তরে তালা ঝুললেও কিছু কিছু অফিস খোলা রয়েছে। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-২৪ হলে গিয়ে দেখা যায় আজ অনেকেই অফিস করছেন।
কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাকাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্টার আবু মো. তারেক বলেন, আমাদের দাবি সুস্পষ্ট, আমাদের উপ-উপাচার্য লাঞ্ছিত হয়েছেন। সেটার সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা কোনোভাবেই কাজে ফিরে যাবো না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, কারণ গত ২০ তারিখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অনেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে কিছু শিক্ষার্থী নামক সন্ত্রাসীরা তারই প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না।
শুধু আমরা না গোটা বাংলাদেশের শিক্ষকেরা আজ স্তম্ভিত। যতক্ষণ পর্যন্ত এটার সুষ্ঠু বিচার না হবে ততক্ষণে আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিক্ষকদের গায়ে হাত দেয়? এমন সন্ত্রাসীদের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিলের দাবি জানাই।
যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি নিশ্চিত করুক প্রশাসন তাহলেই আমরা ঘরে ফিরবো। গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রাকসু নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল ক্যাম্পাসে। প্রার্থীরা নানা কৌশলে প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে সে দিন সন্ধ্যায় বাতিল হয়ে যাওয়া পোষ্য কোটা ১০ শর্তে ফিরিয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পর থেকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে রোববার শিক্ষক-কর্মকর্তারা লাঞ্ছিতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে এক দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করে। সেদিন থেকে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সভা শেষে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম।
অফিসার সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দেন। সোমাবর রাতে আবারও জাতীয়তাবাদী শিক্ষকেরা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানান। এমন পরিস্থিতিতে বিকেল পাঁচটায় রাকসু নির্বাচন কমিশনার জরুরি সভা করে নির্বাচনের তারিখ পেছান। আগামী মাসের ১৬ অক্টোবর ভোট ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন ও বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে নেতাদ্বয় বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য ছাত্রসমাজের বহুল আকাঙ্ক্ষিত রাকসু নির্বাচন এক অদৃশ্য ইশারায় বারবার ব্যাহত হচ্ছে। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যখন শেষ পর্যায়ে, তখন পরিকল্পিতভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি বিশেষ দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরই মধ্যে তিন দফা তারিখ পরিবর্তনের পর চলতি মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন আয়োজনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন নিজেদের সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির অজুহাতে পুনরায় তারিখ পিছিয়ে আগামী ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে। আমরা মনে করি, এটি কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়; বরং এই সিদ্ধান্ত মূলত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। তারা বলেন, প্রশাসন শুরু থেকেই ছাত্রদলকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছে। ওই দল প্যানেল গঠন করতে না পারায় নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পেছানো হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে ২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণা করে ১৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর এবং নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তারিখ পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হলো।
প্রশাসন পরিবর্তিত তারিখ অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আমরা শঙ্কিত। কারণ এরই মধ্যে একটি দলের অনুগত শিক্ষকদের অসহযোগিতা ও প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তারা আরও বলেন, কোনো কোনো প্যানেল নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কায় নির্বাচন বানচালের নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনে তাদের উল্লাসই তার স্পষ্ট প্রমাণ। রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন প্রহসন কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিপুল সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় ছাড়াও অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস পর্যন্ত করতে পারেননি।
কিন্তু এসব বিষয়কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে প্রশাসন একটি দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। নেতাদ্বয় বলেন, আমরা প্রশাসনের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই থমকে যাবে না। রাকসু আদায়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিয়ে তারা সব ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে এবং ক্যাম্পাসকে দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত করে একটি সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।
বিআলো/ইমরান