শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
বিশেষ প্রতিনিধি: যথাযথ ধর্মীয় মর্যদায় শুভ মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।আজ রবিবার ভোরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দূর্গোৎসবের মূল পর্ব শুরু হবে। আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসব সমাপ্ত হবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, শুভ মহালয়ার দিনে কৈলাশ থেকে মা দুর্গা পিতৃগৃহে আগমন করেন এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়। তাই মহালয়া থেকে দূর্গা উৎসবের আমেজ শুরু হয়। দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে সকল পূজা মণ্ডপে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়। সকাল ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল সাড়ে সাতটায় পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল-তর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছে। আর সকাল সাড়ে আটটায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা হয়। সকাল ৯টায় ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারীর চণ্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ইয়াচণ্ডী অর্চনা ছিল। বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা আবাহন ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
দেশ ও জাতির শুভ কামনার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বলে জানান ঢাকেশ্বরী দুর্গাপূজা মণ্ডপের পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়। এদিন দেবী দুর্গার ঘট বসানো হয়। এর মাধ্যমে দেবী দুর্গা বেলতলায় অবস্থান নেন। অর্থাৎ কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে মর্ত্যে (বেলতলায়) আসবেন দেবী দুর্গা। তিনি আরো জানান, এবার দেবী দুর্গার আসার বাহন গজে (হাতি), যা শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর মায়ের বিদায় হবে দোলায় (পালকি), যা অশুভ লক্ষণ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে শুভ মহালয়া তিথিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও পূজা মণ্ডপগুলোতে ধর্মীয় নানান আচার- অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিলো। চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক-কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরে সেই আনুষ্ঠানিকতা দেখা গেছে। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ চণ্ডীপাঠ ও চণ্ডীপূজা ছাড়াও আবাহন সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এছাড়া স্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ এবং খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের পূজামণ্ডপসহ রাজধানীর অন্য মন্দির ও মণ্ডপেও মহালয়ার অনুষ্ঠান ছিলো। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি জানায়, মহালয়ার ছয় দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর (আগামী রবিবার) শ্রীশ্রী দুর্গাষষ্ঠী। এর মাধ্যমেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজা শুরু হবে। সেদিন দেবী দুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পনারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা হবে। সেই সঙ্গে হবে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গোৎসবে ২৯ সেপ্টেম্বর হবে মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, পহেলা অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী।
শারদীয় দূর্গোৎসবের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। তিনি জানান, এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫৮টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর ঢাকা মহানগরে ২৫২টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়েছিল।
বিআলো/ইমরান