সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা জরুরি: নিসচা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও দেশের অর্থনৈতিক এই সমৃদ্ধি অর্জনে সব মতপক্ষের রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা জরুরি। এজন্য সরকারকে সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় আনতে হবে এবং আমাদের জোর দাবি রাজনৈতিক দলগুলোও যেন তাদের আগামী নির্বাচনী ইশতিহারে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করে জাতির সামনে তুলে ধরে।’
এমনটাই দাবি জানানো হয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কানাডা থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিরাজুল মইন জয়। তিনি নিসচার বর্তমান অবস্থান, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের কর্মসূচি ও নিসচা প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনের স্বাস্থ্যগত অবস্থার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের লন্ডনে চিকিৎসার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সুস্থতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। সেইসঙ্গে ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়নে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে নিসচার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লিটন এরশাদ বলেন, ‘সড়কে মানুষের জীবন বাঁচানোর দাবি শুধুমাত্র আমাদের নয়, এটি সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই অনুধাবন করেন। আমরা বিশ্বাস করি সম্মিলিত উদ্যোগ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেশের সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি (জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ) কমানোর পথ সুগম করবে, যার মাধ্যমে এসডিজির ৩.৬ এবং ১১.২ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কার্যকর উদ্যোগ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার এরইমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এই আইনে কিছু কার্যকর দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত পাঁচটি মূল ঝুঁকি যেমন- অতিরিক্ত গতি, স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ও সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, শিশুদের জন্য নিরাপদ আসনের অনুপস্থিতি বিবেচনায় রেখে সার্বিকভাবে সেইফ সিস্টেম এপ্রোচ-এর আলোকে যথাযথ আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে। এজন্য প্রয়োজন স্বতন্ত্র সড়ক নিরাপত্তা আইনের। আশা করি অচিরেই একটা কার্যকর আইন প্রণয়ণ হবে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।’
এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ে ১২০০টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিসমূহ হলো—পিটিআইতে প্রশিক্ষণরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদ্যমান চালকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্রাফিক আইন জানতে ও মানতে রোড ক্যাম্পেইন পরিচালনা, সংবাদ সম্মেলন, র্যালি, পোস্টার প্রকাশ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সড়ক ও অরক্ষিত লেবেল ক্রসিংয়ে সতর্কতামূলক সাইন স্থাপন এবং অনেকে রেললাইনের এপাশে ওপাশে চলাচল করতে গিয়ে অলিখিতভাবে তৈরি হওয়া লেবেল ক্রসিং চিহ্নিত করে রেল কর্তৃপক্ষের নজরে আনা। এছাড়া, বিপজ্জনক বাঁকে সচেতনতামূলক রোড সাইন স্থাপন, মটরসাইকেল চালকদের মাঝে স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট বিতরণ, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বয়সভিত্তিক সড়ক নিরাপত্তামূলক রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময়, বাস ও ট্রাক টার্মিনালে গিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্মিত তথ্যচিত্রের ভিডিও প্রদর্শন ও এর আলোকে করণীয় বিষয়ে আলোচনা। এছাড়া ‘নিরাপদ’ নামে একটি স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট তৌফিক আহসান টিটু, মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, সাদেক হোসেন বাবুল, এডভোকেট বিল্লাল হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মো. গনি মিয়া বাবুল, একে আজাদ, অর্থ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে জহিরুল ইসলাম মিশু, মো. কাইয়ুম খান ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান খান বাবু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন খান, দুর্ঘটনা অনুসন্ধান ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. মাহবুব তালুকদার, দফতর সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. রোকুজ্জামান রোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. দীপক কুমার সরকার, প্রচার সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মহসিন হোসেন খান, যুব বিষয়ক সম্পাদক মো. ইমরান হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য যথাক্রমে নাসিম রুমি, আসাদুর রহমান, ফিরোজ আলম মিলন, আব্দুর রাজ্জাক, নুরুল হুদা, মো. আফজাল হোসেন, মো. জাহিদুর রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. আরিফুল হাসান, মো. কামরুজ্জামান, লায়ন সাব্বির হাজরা শ্যামল, মো. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সদস্য নজরুল ইসলাম ফয়সাল, হুমায়ুন কবীর হিমু, মো. মন্টু প্রমুখ।
বিআলো/তুরাগ