সড়ক নিরাপত্তায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাইলো নিসচা
নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। রাজধানীতে র্যালি ও সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনের নেতারা সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইশতেহারে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
সকাল ১১টায় কাকরাইলে নিসচার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত একটি র্যালি বের হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ। র্যালির উদ্বোধন করেন মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন। এতে নিসচার উপদেষ্টা, আজীবন সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধি ও সমমনা সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। র্যালিটি প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ এখন অত্যন্ত জরুরি।
বক্তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩২ বছরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে নিসচা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা কার্যক্রম এবং মানববন্ধনসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে তারা সড়ক নিরাপত্তায় অবদান রেখে চলেছে। ভবিষ্যতেও আরও বৃহৎ পরিসরে কাজের মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। বক্তারা বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
সমাবেশে মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন সড়ক নিরাপত্তায় পাঁচটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি উল্লেখ করে বলেন—
১) আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য একটি কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
২) পরিবহন খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
৩) সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে।
৪) গণপরিবহন আধুনিকায়ন ও রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫) শিক্ষা, সচেতনতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সড়ক নিরাপত্তার মূল চালিকাশক্তি। শুধু আইন করলেই হবে না—এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সংকল্প ও বাস্তবায়ন। দেশের মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করে—এটি কোনো সভ্য সমাজের চিত্র নয়। নিরাপদ সড়ক নাগরিকের অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
র্যালি শেষে সমাবেশে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লিটন এরশাদ বলেন, ৩২ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, পরিবহন খাতে একটি অদৃশ্য বলয় কাজ করে যা যেকোনো উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে দেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার এবং রাজনৈতিক দলের স্থায়ী ইশতেহারে সড়ক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে সকল দলের অংশগ্রহণে সংসদে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এ কে আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব আব্দুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কায়ুম খান, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার সরকার, প্রচার সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান, প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মহসিন খানসহ অন্যান্য নেতারা। এছাড়া সাভার পৌর, আশুলিয়া, শাহ আলী, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ, রোভার স্কাউট, বয়েজ স্কাউটসহ বিভিন্ন শাখার সদস্যরা অংশ নেন।
বিআলো/ইমরান



