সবজির বাজারে দামের উত্তাপ, অস্বস্তিতে ক্রেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছুদিন ধরে আবারও উত্তপ্ত কাঁচাবাজার। হঠাৎ করে সবজির বাজারে এ ধরনের বড় পরিবর্তনের ফলে জনজীবনে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি।
চলতি সপ্তাহে আবারও হঠাৎ করে বেড়েছে সবজির দাম। রাজধানীর কাঁচামালের বড় আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কাঁচাবাজারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সর্বস্তরের ক্রেতা, বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে নেই স্বস্তি।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়বাজার ও কারওয়ানবাজারসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো সবজিতে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা পর্যন্ত।
বর্তমানে প্রতিকেজি বেগুন ৮০-১২০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা ও পেঁপে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বরবটি ১০০-১২০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, গাজর ৭০-৯০ টাকা, ঝিঙে ৫০-৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, ধনেপাতা ৮০ টাকা, কাঁচা আমড়া ৫০ টাকা ও উচ্ছে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০-৬০ টাকা ও প্রতি পিস লম্বা লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১৬০ টাকা। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক মাসে টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের সবজিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহবুদ্দিন বলেন, ‘কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সবজির দাম। দাম বেশি হওয়ার কারণে বাজারে সবজির বিক্রিও আগের তুলনায় কমে গেছে। এতে দাম ভালো পেলেও আমরা এখন লোকসানে রয়েছি।’
ক্রেতারা বলছেন, সবজির চড়া দামে অন্য পণ্য পরিমাণে কম কিনতে হচ্ছে। গৃহিণী আফসানা বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম এত বেড়ে গেছে যে দৈনন্দিন খাবারের জন্যই কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই, বাজারে স্বস্তি থাকুক, নাহলে দৈনন্দিন খরচ সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
বাবু নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে আসলে মনে হয় সবজিতেই বেতনের সব টাকা শেষ হয়ে যাবে। প্রতিটি সবজির দাম চড়া। দামের চাপে মধ্যম আয়ের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। পরিমাণেও কম কিনতে হচ্ছে। আমরা বাজারে স্বস্তি চাই।’
দামের চাপ থাকলেও কিছু শাকের দাম কমেছে। প্রতি মুঠো লাউ শাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও পুঁইশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি আঁটি ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১০-১৫ টাকা, লালশাক ১০-১৫ টাকা ও পাটশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগির কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো; প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৯০-৩২০ টাকা, লাল লেয়ার ৩২০ টাকা, সাদা কক ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম যথাক্রমে ২৪০ ও ২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে রুপালি ইলিশের দাম। কেজিতে ৩০০-৪০০ টাকা কমে বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৯০০ টাকা ও ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
অন্যান্য মাছের দাম রয়েছে আগের মতোই চড়া। প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০, কোরাল ৮০০-৮৫০, আইড় ৭০০-৮০০, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০, কাতল ৪৫০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাষের ট্যাংরা ৭৫০-৮০০, কাঁচকি ৬৫০-৭০০ এবং মলা ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজারে কোনো বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, ‘নতুন করে দাম বাড়েনি। তবে কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৮য-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫-৯২ টাকা ও মোটা চাল ৫৬-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
বিআলো/শিলি