সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে হুমকিতে সামুদ্রিক সম্পদ: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সমুদ্রে অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে সামুদ্রিক মাছের সংস্থান দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক R.V. Dr. Fridtjof Nansen জরিপের ফলাফল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
আজ বিকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে Ecosystem Approach to Fisheries (EAF)-Nansen Survey 2025–এর ফলাফল ও করণীয় বিষয়ে আয়োজিত ডি ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা জানান, অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণের কারণে জরিপে দেখা গেছে—সামগ্রিকভাবে মাছের স্টক কমে যাচ্ছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, ২৭৩টি শিল্প ট্রলারের মধ্যে ৭২টি ট্রলারে সোনার প্রযুক্তি আছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় অপচয় বাড়ছে ও অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় অক্সিজেন স্বল্পতা, মাইক্রোপ্লাস্টিকের উচ্চ ঘনত্ব এবং জেলিফিশের অস্বাভাবিক বিস্তার সমুদ্রের পরিবেশগত সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
“সাগর আমাদের অমূল্য সম্পদ। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে,” বলেন তিনি।
তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার লাইসেন্স সীমিত করা ও ট্রলারভিত্তিক মাছ ধরার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর গবেষক, বিজ্ঞানী ও স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সমন্বিত বৈঠক করা হবে।
“আমরা শুধু প্রতিবেদন গ্রহণ করেই বসে থাকব না, দ্রুত করণীয় ঠিক করতে হবে,” বলেন তিনি।
তিনি এফএও ও নরওয়ে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের নিজস্ব সমুদ্রজরিপ জাহাজের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। তিনি বলেন, নরওয়ে সরকার ও এফএওর সহযোগিতায় বাংলাদেশের আধুনিক জরিপ প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের নানসেন জরিপ ছিল বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেমভিত্তিক সামুদ্রিক সম্পদ মূল্যায়ন। নতুন জরিপের সুপারিশসমূহ আন্তরিকভাবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাম্প্রতিক জরিপে-৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫টির বেশি কাঁকড়া প্রজাতি, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ, ১৩ প্রজাতির প্রবাল চিহ্নিত হয়েছে।
এ ছাড়া ৬৫টি নতুন মাছের প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি প্রজাতি শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগরেই পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ ও মানবসৃষ্ট চাপ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে সংকট তৈরি করছে। এ থেকে উত্তরণে এখনই সার্বিক ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপটি ছিল ২০১৮ সালের পর দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ সামুদ্রিক ইকোসিস্টেম জরিপ।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন:- রয়্যাল নরওয়েজিয়ান রাষ্ট্রদূত হোকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন, এফএও প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি।
প্রযুক্তিগত ব্রিফিং উপস্থাপন করেন:- নরওয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন রিসার্চের বিভাগীয় প্রধান ও ক্রুজ লিডার ড. এরিক ওলসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও সহ–ক্রুজ লিডার ড. মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন।
স্বাগত বক্তব্য দেন এফএও বাংলাদেশের জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী ও ডিএফএন জরিপ ২০২৫–এর ফোকাল পয়েন্ট ড. মো. আবুল হাসানাত।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন।
বিআলো/এফএইচএস



