সরাইলে আকাশী হাওর ভরাটে মহোৎসব
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে চলছে অবৈধ কার্যক্রম
নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার প্রাকৃতিক জলাধার ধরন্তি বিল (আকাশী হাওর) এখন ভরাটের মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে-পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে হাওরের জলাভূমি ও কৃষিজমি দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’ এ ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ জানিয়েছে এবং অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
সম্প্রতি সংগঠনটির একটি পরিদর্শন টিম সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায়, দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু ব্যক্তি হাওরের বিভিন্ন অংশে মাটি ও বালু ফেলে ভরাট করছে। এতে হাওরের প্রাণপ্রবাহ, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।
বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, কোনো হাওর, বিল, জলাশয় বা কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন আবশ্যক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ভরাট কার্যক্রম চলমান রয়েছে-যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
‘তরী বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, “এটি শুধু হাওরের পরিবেশ ধ্বংস নয়, জীববৈচিত্র্যের ওপরও সরাসরি আঘাত। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরাইলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-অবৈধ কার্যক্রম দ্রুত বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
তিনি আরও জানান, “এই হাওরে বিপুল সংখ্যক জলচর পাখি, মাছ এবং স্থানীয় কৃষকের ফসল উৎপাদন নির্ভর করে। জলাধার ভরাট হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
এলাকাবাসী জানান, এক সময় বর্ষা মৌসুমে হাওরে মাছ ধরা, পাখি দেখা ও কৃষিকাজে ব্যস্ততা দেখা যেত। এখন সেখানে ট্রাক, বালু ও ইটের চলাচল বেড়ে গেছে, যা পুরো হাওরের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তরী বাংলাদেশ ও সচেতন নাগরিকরা দাবি জানিয়েছেন-অবৈধ ভরাট কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে হাওর এলাকা রক্ষায় একটি দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, এই হাওরে শীত মৌসুমে অবৈধভাবে মাটি কাটা ও দখলবাজির ঘটনাও ঘটে থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
বিআলো/এফএইচএস