সর্দি-কাশিতে আদা, যা বলছে বিজ্ঞান
বিআলো ডেস্ক: সর্দি, কাশি বা গলাব্যথা শুরু হলেই অনেকেই ওষুধের বদলে ভরসা করেন ঘরোয়া উপাদানের ওপর। সে তালিকার শীর্ষে থাকে আদা, কখনো চা, কখনো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও প্রশ্ন থেকেই যায়, আদা কি সত্যিই সর্দি-কাশি সারাতে পারে, নাকি এটি কেবল সাময়িক আরাম দেয়? আধুনিক গবেষণা বলছে, আদা কোনো জাদুকরী ওষুধ না হলেও উপসর্গ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
আদা কি সর্দি পুরোপুরি সারাতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনো এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যা নিশ্চিতভাবে বলে যে আদা একাই সর্দি-কাশি নির্মূল করতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আদা সর্দি প্রতিরোধে সহায়ক এবং গলা ব্যথা, কাশি ও প্রদাহের মতো উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আদা রোগ সারানোর চেয়ে আরাম দেওয়ার কাজটাই বেশি করে।
কেন আদা ঘরোয়া চিকিৎসায় এত জনপ্রিয়?
আদার ভেতরে থাকা জিঞ্জেরল ও শোগাওল নামের প্রাকৃতিক যৌগই এর প্রধান শক্তি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উপাদানগুলোর কারণেই আদা বহু বছর ধরে প্রাকৃতিক চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
গবেষণা অনুযায়ী আদার কিছু উল্লেখযোগ্য গুণ—
# জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্য
আদার প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বৃদ্ধি দমন করতে সাহায্য করে। ফলে সর্দির সঙ্গে যুক্ত জীবাণুর প্রভাব কমতে পারে।
# অ্যান্টিভাইরাল ক্ষমতা
ল্যাবভিত্তিক গবেষণায় আদার ভাইরাসবিরোধী গুণের প্রমাণ মিলেছে। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আদার সঙ্গে রসুন ব্যবহার করলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা আরও বাড়ে।
# প্রদাহ কমাতে সহায়ক
গলা সংক্রমণ বা ফ্যারিঞ্জাইটিসের ক্ষেত্রে আদা প্রদাহ হ্রাস করতে পারে। এতে গলার ভেতরের ফোলাভাব কমে এবং ব্যথা উপশম হয়।
# অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর
আদায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুকনো আদায় এই উপাদান তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ধরে কার্যকর থাকে।
সর্দি-কাশিতে আদা কীভাবে ব্যবহার করবেন?
ঝাঁঝালো স্বাদ ও উষ্ণতার কারণে আদা গলাব্যথায় দ্রুত আরাম দেয়। চাইলে ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন উপায়ে—
* গরম পানিতে আদা ও লেবু মিশিয়ে চা
* কাঁচা আদার ছোট টুকরো চিবিয়ে
* রান্না বা স্যুপে আদা যোগ করে
* জুস বা স্মুদিতে আদা মিশিয়ে
* নারিকেল পানির সঙ্গে ব্লেন্ড করে ‘আদা শট’ হিসেবে
আদা-মধু: নিরাপদ কিন্তু সতর্কতা জরুরি
খাবার ও পানীয় হিসেবে আদা সাধারণত নিরাপদ। মধুর নিজস্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ থাকায় আদার সঙ্গে মধু খেলে শরীর আরও শক্তিশালী হতে পারে। তবে চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সর্দি-কাশি থাকলে বা উপসর্গ গুরুতর হলে ঘরোয়া চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
সংক্ষেপে বলা যায়, আদা সর্দি-কাশির নিশ্চিত চিকিৎসা নয়, তবে সঠিকভাবে ও নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি শরীরকে আরাম দিতে পারে এবং উপসর্গ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
বিআলো/শিলি



