সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির ভাই টিপুর বাণিজ্য নির্বাচিত চাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলররা আত্মগোপনে
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী, চাঁদপুরঃ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট ভারতে পলায়ন করার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়রসহ ২০ কাউন্সিলর। গা ঢাকা দেওয়া এ সব কাউন্সিলর ও অপসারিত মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি ও তার ভাই টিপুর আশীর্বাদপুষ্ট। দীপু মনি ও টিপুর কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্যে তারা একদলীয় ভোটে মেয়র, কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অধিকাংশ কাউন্সিলরই এখন নাশকতাসহ ছাত্র- জনতার ওপর হামলার ঘটনায় একাধিক মামলার আসামি। মেয়র ও কাউন্সিলরের মধ্যে সবাই সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে চলে যান আত্মগোপনে।
পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের ২০ জন কাউন্সিলর গা-ঢাকা দেওয়ায় কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে ওয়ার্ডের নাগরিক সেবা। এসব কাউন্সিলররা কেউ অফিসে আসেন না আটক ও জনরোষের ভয়ে। তবে দু’একজন মহিলা কাউন্সিলর গোপনে এসে কিছু কাজ করছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। আত্মগোপনে থাকা অধিকাংশ কাউন্সিলর নাশকতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি। চাঁদপুর পৌরসভার ১৫ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও ৫ জন মহিলা কাউন্সিলরের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির অনুসারী। অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে দলীয়ভাবে মনোনীত ও নির্বাচিত করার জন্যে দীপু মনির ভাই জেআর ওয়াদুদ টিপু কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিলেন। বঞ্চিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা। আর এ কারণেই জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থিত কোনো প্রার্থীকে একদলীয় ওই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি।
দীপু মনি ও টিপুর আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেয়র জুয়েল অপসারণের পর চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান একরামুল সিদ্দিক। তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এডিসি, অ্যাডমিন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক। গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।পরদিন অর্থাৎ ২০ আগস্ট নতুন প্রশাসকের সভাপতিত্বে চাঁদপুর পৌরসভায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় চাঁদপুর পৌরসভার ১৫ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৫ জন সংরক্ষিত নারীসহ ২০ কাউন্সিলরই অনুপস্থিত ছিলেন।
পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভুইয়া জানান, আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যুসনদসহ যাবতীয় নাগরিক সেবায় ভোগান্তি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেহেতু এসব সেবা অনলাইন ভিত্তিক, তাই পলাতক কাউন্সিলরদের মোবাইল ফোনে মেসেজ যায়। তারা রেসপন্স না করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে অ্যাপ্রুভাল নিয়ে সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
পৌরস- ভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামছুদ্দোহা জানান, শহরে পানিবদ্ধতা নিরসন, ভেঙে যাওয়া সড়ক সংস্কারসহ আনুসঙ্গিক কাজগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কাউন্সিলদের অনুপস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়া উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পৌরসভার প্রশাসক স্যারের নির্দেশে অগ্রগতি চলমান। প্রজেক্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক একরামুল সিদ্দিক বলেন, নাগরিক সেবায় ভোগান্তি নিরসনে অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের পরিবর্তে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া পৌরসভার সকল নাগরিক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এদিকে আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ২-৩টি মামলা করা হয়েছে। ওই কাউন্সিলরদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিআলো/তুরাগ