সিটি কলেজকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকা থেকে ঢাকা সিটি কলেজকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
বুধবার দুপুরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ঢাকা কলেজের বাস যেতে তারা বাধা দেন এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের ‘শঙ্খনীল’ নামে একটি বাস ভাঙচুর করে। এর পরপরই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সায়েন্সল্যাবে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ, শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ৩০ জনের অধিক আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সন্ধ্যা পৌনে ৭ টার দিকে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় মোট ৯টি দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল ইসলাম। সেখানে দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের আহত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। কলেজের স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে, যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। হামলায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে। এর আগের সব বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাই পরবর্তী সময়ে সংঘর্ষ এড়াতে সিটি কলেজকে স্থানান্তর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে যখন সেনাবাহিনী ঢুকে পড়ে, তখনো পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে এসেছিল। দুই দিকে ঢিলের মাঝখানে পড়ে আমার হাতেও ঢিল লেগেছে। ছাত্ররা উদ্ধার করে আমাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। ক্যাম্পাসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া এবং পিটুনির ফলে আমাদের ছাত্ররা আহত হয়েছে। আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এর সমাধান করবেন। যাতে আমাদের ছাত্ররা শান্ত থাকে ও কলেজের কার্যক্রম সচল রাখা যায়।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সিটি কলেজ প্রশাসন। গতকাল রাতে কলেজের ওয়েবসাইটে নোটিস দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক কাজী নেয়ামুল হকের সই করা ওই সংক্ষিপ্ত নোটিসে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণে আগামীকাল (আজ) সব ক্লাস বন্ধ থাকবে।
পুলিশ বলছে, তিন দিন থেকেই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তারই ফল হিসেবে বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে সংঘর্ষে জড়ান দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা কলেজের ৯ দফা দাবিগুলো হচ্ছে:
১. দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি শিক্ষকরাও আহত হয়েছেন।
২.আমাদের স্থাপনায় সেনাবাহিনী সরাসরি হামলা ও ভাঙচুর করেছে। যা আমাদের জন্য লজ্জানজক। এ হামলায় সংশ্লিষ্ট জড়িত প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বিশেষ করে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা যারা এই হামলার নির্দেশ দিয়েছে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
৪. ইতিপূর্বে সকল বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সিটি কলেজ কতিপয় সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এবং পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে সিটি কলেজকে স্থানান্তর করতে হবে।
৫. সিটি কলেজের যেসকল শিক্ষকরা এই নিন্দনীয় ঘটনা সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে এবং জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে পরিদর্শন করতে হবে।
৭. এই হামলায় জড়িত সেনা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
৮. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন এবং শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাই পরিকল্পিতভাবে ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হামলা করে বর্তমান সরকারতে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে সরাসরি সিটি কলেজ এবং পুলিশ জড়িত ছিল।
৯. ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সকল দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে ঢাকা কলেজে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
বিআলো/নিউজ