সুন্দরবন বন্ধ, তবুও অবাধে চলছে মাছ ও কাঁকড়া শিকার
মুশফিকুর রহমান: সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য মাছ ও কাঁকড়া আহরণ এবং পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। কিন্তু বাস্তবে এই নিষেধাজ্ঞা মানা তো দূরের কথা, কিছু অসাধু কোম্পানি ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যারা নির্বিঘ্নে সুন্দরবনের অভয়াশ্রম ও খাল-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া শিকার চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, এই সিন্ডিকেট বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করছে। যার ফলে জেলেদের জালে কিছু মাছ উঠলেও প্রায় ৭০ শতাংশ মাছ খালেই মরে পঁচে যাচ্ছে। এতে করে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
নীলকোমল, বালুরগাং, আমড়া তুলি, পুনতি দ্বীপ, কেঁড়ড়াসুটি, ভোমরখালী, মোরগখালী, চেরাগাখি, নলবুনিয়া, পিনখালি, কালাবগি, আদাচাই, মামার খালসহ অসংখ্য খাল ও নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২৫০টি নৌকা দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এই মাছগুলো রাতের আঁধারে কয়রার চাঁদআলী, নওয়াবেকি, প্রতাপনগরসহ বিভিন্ন মৎস্য আড়তে বিক্রি হচ্ছে।
জেলেদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ মাছ ধরতে গেলে বন কর্মকর্তা ও পুলিশ দিয়ে তাকে আটক করিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বাধ্য হয়ে ‘ম্যানেজ’ করেই সুন্দরবনে ঢুকতে হয়। অভিযোগ আছে, নৌকা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বন বিভাগের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা এ চুক্তিতে অংশ নিচ্ছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ ও কাঁকড়া ধরার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেও হঠাৎ করে গিয়ে বিভিন্ন খালে টহল কার্যক্রম মনিটর করি।”
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশির জেলে সালাম গাজীসহ অনেকেই বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা যদি সহায়তা পেতাম, তবে সুন্দরবনে ঢুকতে হতো না। কিন্তু প্রকৃত জেলেরা সাহায্য পান না, বরং অনেক সচ্ছল মানুষ সরকারি সহায়তা নিচ্ছেন।”
কয়রা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আরাফাত হোসেন প্রশ্ন তোলেন, “যারা বনে ঢুকছে, তাদের রুখতে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? তারা যে মাছ কাঁকড়া ধরে আড়তে বিক্রি করছে, সেসব নিয়েও কোনো নজরদারি নেই কেন?”
সচেতন মহল মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন যথাযথ হলে এমন দুর্বৃত্তপনা সম্ভব হতো না। তাদের মতে, “নিষেধাজ্ঞা কেবল সাধারণ জেলেদের জন্য, প্রভাবশালীদের জন্য নয়।”
নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের নামে কাগজে-কলমে টহল দেখিয়ে, প্রকৃতপক্ষে দুর্বৃত্তদের হাতে সুন্দরবনের সম্পদ তুলে দেওয়ার অভিযোগ দিনদিনই প্রবল হচ্ছে। কার্যকর মনিটরিং ও প্রকৃত জেলেদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত না হলে এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না।
বিআলো/তুরাগ