সুন্দরবনের পাঁচ কুমিরের অজানা জীবন কাহিনি
মাসুম হাওলাদার, বাগেরহাট: সুন্দরবনের লোনাপানির কুমিরকে ঘিরে এক অভিনব গবেষণা থেমে গেছে হঠাৎ করেই। আধুনিক স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছিল পাঁচ কুমিরের গায়ে—জুলিয়েট, মধু, পুটিয়া, জোংড়া ও হাড়বাড়িয়া। উদ্দেশ্য ছিল গভীর অরণ্যের ভেতরে কুমিরেরা কীভাবে দিন কাটায়, কোথায় যায়, কতটা চলাফেরা করে—সেসব অজানা রহস্য উন্মোচন করা।
২০২৪ সালের মার্চে করমজল প্রজননকেন্দ্র থেকে শুরু হয় এই অভিযান। প্রথমে জুলিয়েটকে মুক্তি দেওয়া হয়, পরে পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারও জন্ম হয়েছিল সুন্দরবনের খালে, কেউ উদ্ধার হয়েছিল লোকালয় থেকে, আবার কেউ দীর্ঘ বন্দিজীবন শেষে ফিরে গিয়েছিল বনের কোলে।
প্রথমদিকে প্রতিটি স্যাটেলাইট সিগন্যাল যেন একেকটি গল্প শোনাতো। গবেষকরা মানচিত্রে বিন্দুর মতো চিহ্ন দেখে বুঝতে পারতেন কুমিরের গতিপথ। জুলিয়েট ৭১ দিনে অতিক্রম করে ১৪৫ কিলোমিটার, মধু ১২৭ দিনে ১৭০ কিলোমিটার, পুটিয়া ৮৩ দিনে ২০৪ কিলোমিটার এবং হাড়বাড়িয়া মাত্র ৫২ দিনে ৫১ কিলোমিটার পথ চলে। তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে ওঠে জোংড়া। শরীয়তপুর থেকে উদ্ধার হওয়া এই কুমির ৬৪ দিনে ৪৭৩ কিলোমিটার ঘুরে আবার নিজের খালে ফিরে যায়।
কিন্তু কিছুদিন পর একে একে থেমে যায় ট্রান্সমিটারগুলোর সিগন্যাল। হঠাৎ করেই অচেনা অন্ধকারে হারিয়ে যায় কুমিরগুলোর পথচলা। এখন আর কেউ জানে না তারা কোথায় আছে।
এই গবেষণায় অংশ নেয় আইইউসিএন বাংলাদেশ, জিআইজেড জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কুমির বিশেষজ্ঞ সামারাভিরা ও পল বেরি। সহযোগিতায় ছিলেন বন বিভাগ ও ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টারের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে লোনাপানির কুমির কেবল সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের জরিপে সংখ্যা ধরা পড়ে ১৫০ থেকে ২১০টির মধ্যে। বর্তমানে করমজল প্রজননকেন্দ্রে আছে ৯২টি কুমির। তবে বংশবিস্তার ক্রমেই কমছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
করমজল প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, আমরা কুমিরের জন্ম, ডিম দেওয়া, বাচ্চা ফুটানো, খাদ্যাভ্যাস ও আয়ু সম্পর্কে জানতাম, কিন্তু চলাফেরার তথ্য ছিল না। স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানোর মাধ্যমে তা জানতে পেরেছি। লবণাক্ততার কারণে সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হলেও প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য মিলেছে। পাঁচ কুমির প্রায় এক হাজার ৪৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। এ তথ্য ভবিষ্যতে বিলুপ্তপ্রায় কুমির সংরক্ষণে কাজে লাগবে।
বিআলো/এফএইচএস