• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    স্মৃতির বিকেল: আমার ছাদবাগান, আমার আশ্রয় 

     dailybangla 
    24th Jul 2025 2:19 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

     ✍️ লুৎফুন্নাহার সোনিয়া

    বিকেলের আলো যখন একটু কোমল হয়ে আসে, রোদের ঝাঁঝ কমে যায়, আমি তখন ছাদে উঠি। হাতে থাকে গাছে পানি দেওয়ার সেচনী, আর মনে জমে থাকে অনেক না বলা কবিতা। আমার ছাদবাগানটা যেন প্রাণের এক টুকরো প্রশান্তি—সবুজে মোড়া, ফুলে ঘেরা, পাখির কিচিরমিচিরে ভরা এক শান্ত পৃথিবী।

    এই ছাদবাগানে আমি নিজের হাতে সব গাছ লাগিয়েছি। গোলাপ, জবা, জুঁই, বেলী, কামিনী, অলকানন্দা, বাগানবিলাস, মাধবীলতা, করবী, সন্ধ্যামালতী—নামের মতোই সৌন্দর্যে ভরপুর এই বাগান। প্রতিদিন আমি নিজে পানি দিই, কথা বলি গাছেদের সঙ্গে। ওদের পাতায়, ফুলে আমার যত্নের ছোঁয়া থাকে। মন খারাপ থাকলেও, এখানে এলেই যেন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।

    ছাদের আরেক সঙ্গী আমার পোষা পাখিরা। বাজিগর, ককাটেল, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু আর বাঁশঘুঘু—সবাই খাঁচায় থাকলেও, তাদের ডাক ছাদটাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আমি বসি এক পাশে, শুনি ওদের ডাক, কখনো চোখ বুজে আবৃত্তি করি কোনো প্রিয় কবির কবিতা। ছাদে বসেই আমি কবিতার চর্চা করি—নিজের মনের সঙ্গেই যেন আলাপ হয় সেখানে।

    বিকেলবেলা ছাদের আকাশটা থাকে একেবারে শান্ত। মাঝে মাঝে এক-আধটা মেঘ ভেসে যায়, সূর্যের আলো নরম হয়ে এসে পড়ে পাতার গায়ে। সেই আলোয় গাছেরাও যেন শান্ত হয়ে যায়। আমার মন তখন ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসে। মাথার ভেতরের কথাগুলো নিঃশব্দে মিলিয়ে যায়, আর ভরে ওঠে এক গভীর প্রশান্তিতে।

    আমার দুই মেয়েও ছাদে সময় কাটাতে ভালোবাসে। কখনো গাছে পানি দেয়, কখনো খাঁচার পাশে দাঁড়িয়ে পাখিদের সঙ্গে কথা বলে। ওদের হাসি, গল্প, দুষ্টুমি—আর ছাদের সবুজ গাছপালা মিলিয়ে যেন গড়ে উঠেছে এক চরম প্রশান্তির জগৎ। অনেক সময় ওরা আমার পাশে বসে, আমি আবৃত্তি করি—সেই মুহূর্তগুলোয় মনে হয়, সময় থেমে গেছে।

    আমার ছাদ শুধু গাছ বা পাখির জায়গা নয়, এটা আমার শৈশবের বিকেলগুলোকে আবার নতুন করে ফিরে পাওয়ার জায়গা। ছোটবেলায় বিকেল মানেই ছিল গল্পের বই হাতে নিয়ে এক কোণে বসে পড়া, কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা। এখনকার বিকেলটা একটু ভিন্ন, কিন্তু অনুভবটা ঠিক আগের মতোই।

    অনেকে ভাবে শহরের ব্যস্ত জীবনে প্রশান্তি মেলে না। আমি বলি—হয়তো নাড়ার মতো কোনো পাহাড়ে নয়, নির্জন কোনো সমুদ্রতীরে নয়, কিন্তু নিজের হাতে গড়া একটুকরো ছাদবাগানেও প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বিকেলের বাতাসে পাতার মৃদু শব্দ, পাখির ডাক, আর মনের গভীর নীরবতা মিলিয়ে ছাদটা হয়ে উঠেছে আমার মানসিক আশ্রয়স্থল।

    যখন ক্লাসে ছাত্ররা হেসে বলে—“ম্যাম, আপনি কি কখনো ক্লান্ত হন না?” আমি একটুখানি হেসে বলি— “হই তো বটেই। তবে সন্ধ্যার আগে একটু সময় পাই নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার। আমার একটুকরো ছাদবাগান আছে, যেখানে গেলেই মনটা সতেজ হয়ে যায়। ক্লান্তিগুলো যেন নিজে থেকেই মুছে যায়। সেখানেই আমি প্রতিদিন নিজেকে খুঁজে পাই।”

    লুৎফুন্নাহার সোনিয়া সহকারী শিক্ষক (বাংলা) তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালতলী, বরগুনা।

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031