হাওর মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে: রিজওয়ানা হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক: পানি সম্পদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওর মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করা হবে। এ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেশবাসীর মতামত গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সোমবার রাজধানীর পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত ‘হাওর মহাপরিকল্পনা মূল্যায়ন ও হালনাগাদকরণের জন্য সমন্বিত সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “যারা কর্মশালায় সরাসরি উপস্থিত হতে পারেননি, কিন্তু হাওর, প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে ভাবেন—তাদের মতামতও আমরা সংগ্রহ করব। স্থানীয় মানুষসহ সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতেই হাওরের হালনাগাদ মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।”
তিনি জানান, দেশের ৩৭১টি হাওরের সীমানা নির্ধারণ করা উচিত এবং এসব হাওরকে একটি জীবন্ত জলাধার ও প্রাণবৈচিত্র্যকেন্দ্রিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। প্রতিটি হাওরের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য আলাদা, কোথাও মাছ উৎপাদন বেশি, কোথাও ধান চাষ বেশি। তাই মহাপরিকল্পনাটিকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য করে তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হাওর বাংলাদেশের এক অনন্য পরিবেশ ব্যবস্থা বা ইকোসিস্টেম, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। পর্যটনের কারণে হাওরের মাছ ও মৎস্যজীবীদের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তবে স্থানীয় প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপে বিষয়টি এখন কিছুটা শৃঙ্খলায় এসেছে।
উপদেষ্টা বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওর আজ আন্তর্জাতিকভাবে গ্লোবাল হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। হাওর আজ আমাদের বিশ্ব দরবারে পরিচিত করছে। আমরা যেমন নদীকে জীবন্ত সত্তা বলি, তেমনি হাওরও একটি জীবন্ত সত্তা।”
স্থানীয়দের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি নিজেদের জমি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন এবং সেখানে কলকারখানা গড়ে ওঠে, তবে বর্ষায় সেই বর্জ্য হাওরের পানিতে মিশবে, ফলে পরিবেশ ভয়াবহভাবে দূষিত হবে।” হাওরবাসীকে হাওরের করণীয় ও বর্জনীয় (ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস) বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানানো জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “যদি মনে করি হাওর মাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেখানে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর প্রভাব শুধু মাছ নয়, অন্যান্য অণুজীবের জীবনেও পড়ছে। এ তথ্য হাওরের কৃষকদের আগে কখনো সেভাবে জানানো হয়নি।”
স্বাস্থ্যসেবার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, হাওর এলাকায় একটি হসপিটাল বোর্ড গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। প্রয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে এ সংক্রান্ত সহায়তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
বনায়ন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তিনি বলেন, “কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে বন বিভাগের মাধ্যমে হাওরে গাছ লাগানো হবে এবং স্থানীয়রাই তা দেখভাল করবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। স্বাগত বক্তব্য দেন হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক, আইডব্লিউএম-এর নির্বাহী পরিচালক, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক ভার্চুয়ালি জুম প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা দলীয়ভাবে সমন্বিত সমীক্ষার ওপর উপস্থাপনা ও আলোচনা করেন।
বিআলো/সবুজ