হাত নেই, পা দিয়ে লিখে এমবিএ পাস করলেন লোহাগাড়ার আলী
নুরুল আমিন,লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার দূর্গম হরিদাঘোনা গ্রামের মো. আলী জন্মগতভাবে দু’হাতবিহীন। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। বেঞ্চে পা তুলে ডান পা দিয়ে ধীরে, কলমে ভর দিয়ে লেখেন। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সম্প্রতি সম্পন্ন করেছেন এমবিএও।
মো. আলীর বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের হরিদাঘোনায়। বাবা আমিন শরীফ, মা শামসুন্নাহার। জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তাঁর বাবা-মা কখনো আলীকে ভেঙে পড়তে দেননি। ছোটবেলা থেকেই পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করানো হয় তাকে।
প্রাথমিক শিক্ষা বড়হাতিয়া শাহ জব্বারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে শুরুর পথ ছিল কঠিন। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে প্রথমদিকে কোনো স্কুলই তাকে ভর্তি নিতে চাইছিল না। পরে বহু বাধা পেরিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর বিজি সেনেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ এবং সর্বশেষ চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি।
আলীর বাবা-মা বলেন, আলী জন্ম থেকেই হাতবিহীন। তবুও পড়াশোনায় সে ছিল অত্যন্ত মনোযোগী। পা দিয়ে লিখলেও তাঁর লেখা সুন্দর, মনোভাব দৃঢ়।
স্বপ্ন নিয়ে আলী জানান, তিনি সরকারি চাকরি করতে চান। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে আবেদন ও পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু শেষ ধাপে গিয়ে সুযোগ হারিয়ে ফেলেন অনেকবার। তাঁর আক্ষেপ, “অনেক জায়গায় পরীক্ষা দিই, কখনো টিকেও যাই, কিন্তু পরে আর ডাকে না।”
সাতকানিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল হামিদ বলেন, “হাত নেই, তবুও আলীর সংগ্রাম অনন্য। বিবিএ ও এমবিএতে তাঁর ফলাফল খুব ভালো। এরকম ছাত্র দেশের সম্পদ।”
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “মো. আলীর মতো অদম্য ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন তরুণেরা আমাদের গর্ব। তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা করা হবে। পরিবার আবেদন করলে সরকারি সুবিধাও দেওয়া হবে।”
বিআলো/ইমরান



