হারিয়ে যাচ্ছে খুলনার পাড়া-মহল্লার ক্লাব সংস্কৃতি
নিজস্ব প্রতিবেদক: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খুলনার ঐতিহ্যবাহী পাড়া-মহল্লার ক্লাব সংস্কৃতি। একসময় শহরের প্রতিটি এলাকায় খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বইপড়া ও উৎসব আয়োজনের প্রাণকেন্দ্র ছিল এসব ক্লাব। তরুণদের নেতৃত্বগুণ, মানবিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তুলত এই ক্লাবগুলো।
কিন্তু প্রযুক্তির প্রসার, কর্মজীবনের ব্যস্ততা এবং সামাজিক উদাসীনতায় আজ ক্লাব সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। খুলনা শহরকেন্দ্রিক প্রায় চার শতাধিক ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগই এখন কেবল কাগজে-কলমে টিকে আছে।
খুলনার খালিশপুর, দৌলতপুর ও সদর এলাকায় একসময় পরিচিত ক্লাবগুলোর মধ্যে ছিল-পাবলা সবুজ সংঘ, দুর্বার সংঘ, ফিরোজ স্মৃতি সংসদ, উদয়ন ক্লাব, মিলানি ক্লাব, টুটপাড়া স্বেচ্ছাসেবী ক্লাব, চানমারী গ্রিন বয়েজ ক্লাব এবং পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্র।
এক সময় এই ক্লাবগুলোতে ক্রিকেট, ফুটবল, কেরামসহ নানা খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজন হতো। স্থানীয় যুবকেরা মানবিক কাজেও যুক্ত থাকতেন।
খালিশপুরের বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, খালিশপুর ছিল একসময় জমজমাট বাণিজ্যিক এলাকা। ছোট-বড় অনেক ক্লাব গড়ে উঠেছিল। পাটকল বন্ধ হওয়ার পর মানুষ অন্যত্র চলে যায়, ক্লাবগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।
টুটপাড়ার বাসিন্দা শাহিন হাওলাদার জানান, আগে ছুটির দিনে পাড়ায় ক্রিকেট, ফুটবল আর কেরামের খেলা হতো। মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন থাকত। গত ১০-১৫ বছরে সব বন্ধ হয়ে গেছে।
টুটপাড়ার শফিকুল ইসলাম বলেন, মওলারবাড়ি মোড়ে আমাদের একটা ছোট অফিস ছিল। এলাকার সমস্যায় আমরা পাশে দাঁড়াতাম। নতুন প্রজন্মের আগ্রহ না থাকায় ক্লাব বন্ধ হয়ে গেছে।
ফরাজিপাড়ার মিলন শেখ জানান, ২০০২ সালে ‘ইয়ং বয়েজ ক্লাব’ করেছিলাম। সমাজসেবা করতাম, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটত। এখন কেউ আর ক্লাব নিয়ে ভাবে না।
খালিশপুরের ‘দুর্বার সংঘ ক্লাব’-এর সভাপতি মেহেদী জানান, আমাদের ১৯১ জন সদস্য রয়েছে। খেলাধুলা ও মানবিক কাজে আমরা নিয়মিত অংশ নিই। তবে আগের মতো উৎসাহ নেই। তরুণরা খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চা থেকে সরে গেছে।
তিনি মনে করেন, সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্লাব সংস্কৃতিকে আবারও সচল করা সম্ভব।
খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আইনাল হক বলেন, ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। অনেকগুলোর অনুমোদন থাকলেও কার্যক্রম নেই। লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, সামাজিক উন্নয়নে পাড়া-মহল্লার ক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভালো কোনো কর্মসূচি হলে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করে। খেলাধুলা ও সামাজিক কাজে তরুণদের আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিআলো/এফএইচএস



