হার্ট ব্লক: প্রকারভেদ, নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডা. রাইসুর আক্তার (সিনিয়র কনসালটেন্ট ও রিসার্চার)
হার্ট ব্লকের প্রকারভেদ
হার্ট ব্লক হলো হৃদয়ের বৈদ্যুতিক সংকেতের সমস্যা, যা AV নোড বা নীচের চেম্বারে সংকেত পৌঁছাতে বিলম্ব বা ব্যর্থতার কারণে ঘটে। প্রধান তিনটি প্রকার:
1. ফার্স্ট-ডিগ্রি হার্ট ব্লক
AV নোডে সংকেত ধীর গতিতে পৌঁছায়, ফলে বিলম্ব হয়।
সংকেত শেষ পর্যন্ত নীচের কক্ষে পৌঁছায়।
সাধারণত হালকা এবং গুরুতর নয়।
2. সেকেন্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লক
টাইপ I (ওয়েনকেবাচার AV ব্লক): সংকেত ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং মাঝে মাঝে হার্টবিট বাদ পড়ে। সাধারণত কম গুরুতর।
টাইপ II (Mobitz Type II): কিছু সংকেত নীচের কক্ষে পৌঁছায় না, ফলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত ও ধীর হয়। এটি গুরুতর হতে পারে।
3.থার্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লক
উপরের চেম্বার থেকে নীচের চেম্বারে সংকেত সম্পূর্ণভাবে পৌঁছায় না।
নীচের চেম্বার স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্পন্দন শুরু করে, যা ধীর, অনিয়মিত এবং কার্যকারিতা কম হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
হার্ট ব্লক সাধারণত নিম্নলিখিত পরীক্ষা ও মূল্যায়ন দ্বারা নির্ণয় করা হয়:
1. ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG/EKG) – হার্টের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ এবং অনিয়ম নির্ণয়।
2. ইকোকার্ডিওগ্রাম – আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে হার্টের ছবি এবং কার্যকারিতা মূল্যায়ন।
3. স্ট্রেস টেস্ট (Exercise ECG)– শারীরিক পরিশ্রমে হৃদয়ের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ।
4. করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি– ধমনীর ব্লক ও তার তীব্রতা পরীক্ষা।
5. রোগীর ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা– উপসর্গ ও হৃদয়ের ছন্দ পর্যবেক্ষণ।
6. হল্টার মনিটরিং – ২৪–৪৮ ঘণ্টা ধরে হার্টের কার্যক্রম রেকর্ড করে মাঝে মাঝে দেখা হার্ট ব্লক নির্ণয়।
7. অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষা – প্রয়োজনে স্ট্রেস ইকো বা কার্ডিয়াক এমআরআই।
চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে হার্ট ব্লকের ধরন ও তীব্রতার উপর:
1. ওষুধ
বিটা-ব্লকার – হৃদস্পন্দন ও ছন্দ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য।
অ্যান্টি-অ্যারিথমিক ওষুধ – অনিয়মিত হার্টবিট প্রতিরোধ।
2. পেসমেকার ইমপ্লান্টেশন (গুরুতর ব্লকের ক্ষেত্রে)
ডুয়াল-চেম্বার পেসমেকার– অ্যাট্রিয়া ও ভেন্ট্রিকলের মধ্যে সময় সমন্বয়।
বাইভেন্ট্রিকুলার (CRT) পেসমেকার – হার্ট ফেইলিউর রোগীদের পাম্পিং দক্ষতা উন্নত।
সিঙ্গল-চেম্বার পেসমেকার – একটি চেম্বারে স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ।
3. জীবনধারার পরিবর্তন
স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার।
4. হোমিওপ্যাথি
হার্ট ব্লকের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির কোনও বিকল্প নেই।
তবে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
উদাহরণ: ক্রিটিগাস, ডিজিটেলিস, এপসাইনাম, আরনিকা, অ্যাডোনিস ভার্নালিস, কনভ্যালেরিয়া মেজালিস, ল্যাকেসিস, অ্যাব্রট, কলোচিকাম ইত্যাদি।
সতর্কতা: শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করতে হবে।
লেখক ও চেম্বার
ডা. রাইসুর আক্তার
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও রিসার্চার
৪৭-৪৮ নং হাকিম টাওয়ার (দ্বিতীয় তলা), মধ্য বাড্ডা, ঢাকা
হটলাইন: ০১৭৯৯-৪৫-৬৩-৯৮
বিআলো/ইমরান



