১০ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
সেতু আক্তার, ফরিদপুর: সালথার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান প্রায় ১০ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত। তিনি বিভিন্ন মামলায় পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইন মামলায় বর্তমান ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। গ্রেপ্তার এরাইতে ১০ মাস পরিষদে না এলেও থেমে নেই স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরাসরি তিনি নিজেই অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন। এখন ১০ মাস ধরে পালিয়ে থেকে পরিষদ সচিব ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে অনিয়ম দুর্নীতির কার্যক্রম বহাল রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন আটঘর ইউনিয়নের ৭ জন ইউপি সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউপি সচিব ইকবাল হোসেন মিলে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন ভিজিডি কার্ড, রেশন কার্ড, উন্নয়ন তহবিলের টাকায় কেনা সেলাই মেশিন, স্প্রে মেশিন বন্টনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পরিষদে গরীব দুঃখিদের জন্য সরকারী যা আসে তা ভাগ বন্টন হয় আ.লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। পরিষদের কোন মেম্বারেরাও জানেনা কখন কি আসে। মেম্বাররা জানতে চাইলেও সব গোপন রাখেন সচিব। ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা জানান, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
চেয়ারম্যান শুরু থেকেই আমাদের মূল্যায়ন না করে তার ফ্যাসিস্ট আ.লীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন এবং পরিষদে সরকারি যখন যা আসে আমাদের সাথে মিটিং বা পরামর্শ না করেই তার একক সিদ্ধান্তে তার দলীয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জয়নাল মুন্সী জানান, চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ উন্নয়ন তহবিল, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এডিপির প্রকল্পগুলো একক সিদ্ধান্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোনটা আংশিক কোনটা বাস্তবায়ন না করে অর্থ আত্মসাত করেন। আমরা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলী আহমেদ জানান, আমরা শুধু নামে মেম্বার, পরিষদ চালায় সচিব ও চেয়ারম্যানের সহকারী ফ্যাসিবাদ আ.লীগের নেতাকর্মীরা। হতদরিদ্র গরীব মানুষদের আমরা সঠিকভাবে কিছুই দিতে পারিনা। বেশিরভাগ খেয়ে ফেলে সচিব ও চেয়ারম্যানের চামচারা। ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাসুদুর রহমান জানান, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সভা না করেই সভার ভুয়া রেজুলেশন প্রদর্শন এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে কাজ না করেই কাগজে-কলমে উন্নয়ন কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মুকতার হুসাইন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ মেম্বারদেরকে পিআইসি বানিয়ে কাজ শেষে মেম্বারদের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে সব টাকায় জোর করে সচিব নিয়ে যায়। আমরা শুধু কষ্ট করে যাই আর লাভ খায় সচিব আর চেয়ারম্যান। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রাজিয়া বেগম জানান, আমরা তার অনেক অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা জীবনের ভয়ে মেনে নিয়েছি কিন্তু আর না। রাজিয়া বলেন, চেয়ারম্যান ১০ মাস পরিষদে না এসেই পলাতক থেকে সচিবের মাধ্যমে অনিয়ম দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। পরিষদে যখন যা আসে সচিব সব গোপন রাখে। আমাদেরকে জানায় না। রাজিয়া আরও বলেন, পরিষদে ৬৮ টি রেশন আসছে। এর মধ্যে আমার প্রতিবেশী আ.লীগ নেতার মাধ্যমে সচিব ইকবাল হোসেন ৮ টি বড়লোকদের তালিকা ফাইনাল করেছে।
অথচ আমি হতদরিদ্র গরীব মানুষের ৩ টি তালিকা দেওয়ার পরেও পলাতক চেয়ারম্যান সচিবের মাধ্যমে তা কেটে দিয়েছে। এমনকি এই রেশন কার্ডে সব মেম্বারদের তালিকাভুক্ত কোন নাম নেই। সালথা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা ও একটি দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। এরমধ্যে দ্রুত বিচার আইনে তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে পরিষদে অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বালী জানান, আটঘর ইউনিয়নের ৭ জন মেম্বার একসঙ্গে এসে চেয়ারম্যান ও সচিবের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। আমি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ পলাতক থাকার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সোহাগ ১০ মাস ধরে পলাতক স্বীকার করে অভিযুক্ত ইউপি সচিব ইকবাল হোসেন জানান, আমি যা করেছি চেয়ারম্যানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে করেছি।
বিআলো/ইমরান