২৯ চিকিৎসকের পদে আছেন মাত্র ৯ জন, দীর্ঘদিন বন্ধ এক্স-রে ও অপারেশন সেবা
মুশফিকুর রহমান, কয়রা খুলনা: খুলনার কয়রার একমাত্র সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বছরের পর বছর ধরে অব্যবস্থাপনা ও সংকটে জর্জরিত। আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও তা অকেজো, ভবন নির্মাণের কাজ স্থবির, চিকিৎসক ও জনবল সংকট তীব্র। উপজেলার তিন লাখ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ২৯ চিকিৎসকের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৯ জন। চক্ষু, সার্জারি, গাইনি, চর্মরোগ, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকসসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। শুধু তাই নয়, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের তিনটি পদের সবই শূন্য। নেই কার্ডিওগ্রাফার, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, কম্পাউন্ডার, ওটি বয় ও আয়া। চতুর্থ শ্রেণির ২৩টি পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র চারজন।
৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো দোতলা ভবন ভেঙে ফেলার পর নির্মাণ কাজ থমকে আছে। বর্তমানে ১৯ শয্যার একটি ভবনে পুরুষ ও নারী রোগীদের পাশাপাশি রাখা হচ্ছে। শয্যা না পেয়ে রোগীরা মেঝে ও বারান্দায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কক্ষ সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে প্যাথলজি বিভাগ। দীর্ঘদিন কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি।
হাসপাতালে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও কয়েক বছর ধরে অচল। অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে সাধারণ রোগ নির্ণয়ের জন্যও রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে, বাড়ছে ভোগান্তি।
বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ—টয়লেট অস্বাস্থ্যকর, খাবারের মান নিম্নমানের। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে খুলনা, সাতক্ষীরা কিংবা ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। এতে দরিদ্র পরিবারগুলো অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত।
মোস্তফা শেখ নামের এক রোগী জানান,
“কোমরে চোট পেয়ে সরকারি হাসপাতালে এসেছিলাম। এক্স-রে না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে।”
আরেকজন রোগীর স্বজন মোতালেব শিকারি বলেন,
“৩দিন বাবাকে ভর্তি রেখেছি। চিকিৎসক বললেন, এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই, খুলনায় নিয়ে যান। তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়রার মতো দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়ন জরুরি। নচেৎ তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে।
বিআলো/তুরাগ