৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন বিনা বিচারে কারাবন্দি, অবশেষে মুক্তি পেলেন কনু মিয়া
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: মামলার রায় হয়নি, বিচারও হয়নি—তবুও কেটেছে টানা ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন কারাগারে। মানসিক রোগে আক্রান্ত সেই কনু মিয়া অবশেষে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মুক্ত আকাশে ফিরেছেন। দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
কনু মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার সিংহগ্রাম গ্রামে। পিতা মৃত চিনি মিয়া। তরুণ বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারান কনু মিয়া। সেই সময়ের একটি ট্র্যাজেডি তার জীবনের গতিপথই পাল্টে দেয়।
১৯৯৫ সালের ২৫ মে গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের মা মেজেষ্টর বিবিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কনু মিয়া। পরে গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন মাত্র তিন লাইনের একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। সেই থেকেই শুরু হয় তার দীর্ঘ কারাবাস।
প্রথমদিকে পরিবারের সদস্যরা তাকে দেখতে যেতেন। তবে একপর্যায়ে তার খোঁজ নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারও প্রায় ভুলেই গিয়েছিল, কনু মিয়া বেঁচে আছেন কিনা।
সম্প্রতি কনু মিয়ার বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাবাসের বিষয়টি নজরে আনেন হবিগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন। তিনি মামলার বাদী ও নিহত মায়ের অন্য দুই ছেলে মনু মিয়া ও নাসু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা কনু মিয়ার মুক্তিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এরপর লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী এম এ মজিদ সোমবার (১৪ জুলাই) হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। বিচারক জেসমিন আরা বেগম জামিন মঞ্জুর করলে কনু মিয়ার মুক্তির পথ খুলে যায়।
এম এ মজিদ বলেন, একজন মানুষ কোনো বিচার ছাড়াই ৩০ বছর কারাগারে ছিলেন—এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জার। আজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এজন্য আমরা সন্তুষ্ট।
হবিগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল হাই বলেন, এটি একটি মানবিক ও যুগান্তকারী উদ্যোগ। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
মুক্তির পর কারা ফটকে কনু মিয়ার দুই ভাই তাকে জড়িয়ে ধরেন। আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনজনই। দীর্ঘ ৩০ বছর পর ভাইকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত তারা বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি ও আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
বিআলো/এফএইচএস