ফুচকা বিক্রি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ টিপু সুলতান
নিজস্ব প্রতিবেদক: টিপু সুলতান, বাংলাদেশের এক সাধারণ স্ট্রিট ফুড বিক্রেতা, যিনি ফুচকা বিক্রি করেই হয়ে উঠেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ। তার ভিডিও এখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৌঁছে গেছে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও। কীভাবে শুরু হলো তার এই যাত্রা?
ফুচকার ব্যবসার সাথে কনটেন্ট ক্রিয়েশন স্ট্রিট ফুড বিক্রেতা টিপু সুলতানের গল্পটা একেবারেই ভিন্ন। ফুচকা বিক্রি আর কনটেন্ট তৈরি একসাথে শুরু করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার। প্রথম ভিডিও আপলোড করার পর সেটি রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এই অভাবনীয় সাড়া তাকে আরও কনটেন্ট বানাতে উৎসাহিত করে। তার ভিডিওগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ফুচকা তৈরি এবং কাস্টমারদের সাথে তার আন্তরিক ব্যবহার।
“প্রথমে তো ভাবিইনি ফুচকা আর কনটেন্ট একসাথে করব,” বলেন টিপু সুলতান। শখের বশে একদিন একটা ফুচকা বানানোর ভিডিও পোস্ট করলেন রাতে, সকালে উঠে দেখেন পাঁচ লাখ ভিউ! তখন থেকেই তিনি শুরু করেন ফুচকা নিয়ে তার কনটেন্ট তৈরি।
কাজের মাঝে কনটেন্ট তৈরি ফুচকা বিক্রির পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করা সহজ কাজ নয়। “আগে সন্ধ্যা ৬টা-৭টার মধ্যেই ফুচকা শেষ হয়ে যেত। এখন কনটেন্টের জন্য মাঝে মাঝে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়,” বললেন তিনি। ফুচকা বানানোর প্রতিটি ধাপ ভিডিওতে তুলে ধরা যতটা মজার, ততটাই কষ্টের। তবু দর্শকদের ভালোবাসাই তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা বলে মনে করেন এই ফুচকা বিক্রেতা।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রায় সব প্ল্যাটফর্মেই টিপুর অ্যাকাউন্ট আছে। তবে, তার ভিডিওতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় টিকটকে। টিপুর টিকটক অ্যাকাউন্ট ‘হিউমার উইথ সুলতান’-এ এখন রয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ফলোয়ার। টিকটকের এই ভিডিওগুলোতে দেখা যায় মিলিয়ন ভিউ এবং তার ফলোয়ারদের শত শত কমেন্ট।
সোশ্যাল মিডিয়াতে কনটেন্ট ভাইরাল হওয়ার পর টিপুর জীবনে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। “অনেকে এখন বিদেশ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে, দেশে থাকা তাদের পরিবার এবং প্রিয়জনের বাসায় ফুচকা নিয়ে সারপ্রাইজ দাওয়ার জন্য। এই বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগে। আগে শুধু রাস্তায় বিক্রি করতাম, এখন বেশিরভাগ সময় বাসায় গিয়ে ফুচকা বিক্রি করি,” জানালেন তিনি। সম্প্রতি ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের নিয়ে টিকটকের একটি আয়োজনেও আহ্বান পায় টিপু সুলতান। এখানে অংশগ্রহণ করা নিয়ে টিপু বলেন অনলাইনে নিজের ব্যবসাকে কীভাবে তুলে ধরা যায় সেটি সম্পর্কে তিনি এখান থেকে জানতে পেরেছেন। বিভিন্ন ধরনের সমালোচনাও হয়,টিপু হাসিমুখে সমালোচনা গ্রহণ করেন। “মাথায় ফুচকার বোল আর হাতে আইফোন দেখে অনেকে হাসাহাসি করে। আমি এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। যারা আমাকে চেনে, তারা আমাকে সম্মান করে,” বললেন টিপু।
টিপু সুলতান বর্তমানে শুধু কনটেন্ট তৈরিতেই মনোযোগী। ভবিষ্যতে তিনি একটি টিম তৈরি করে বড় ইভেন্টে ফুচকা পরিবেশনের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, “বিয়ে বা করপোরেট ইভেন্টে আমি ফুচকা বিক্রি করতে চাই, যেখানে সাথে আমার একটা টিমও থাকবে।”
বেকার যুবকদের উদ্দেশে টিপুর বার্তা হলো- “কোনো কাজই ছোট নয়। পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে যে কেউ জীবনে সফল হতে পারে। আমিও খুব ছোট ব্যবসা শুরু করে আজ এই পর্যায়ে এসেছি। কেউ চাইলে আমার মতো উদ্যোগ নিতে পারে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার জনপ্রিয়তা শুধু তাকে নয়, পুরো স্ট্রিট ফুড ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। টিপু সুলতানের গল্প বলে দেয়, সৃজনশীলতা আর পরিশ্রম একসাথে হলে সাফল্যের দুয়ার খুলে যায়।
বিআলো/তুরাগ