নওগাঁয় বিয়ের প্রলোভনে গণধর্ষণ: ২৪ বছর পর দুইজনের যাবজ্জীবন
দীর্ঘ ২৪ বছর পর মিলল ন্যায়বিচার, আদালতের রায়ে ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
এ.বি.এস রতন, নওগাঁ: নওগাঁয় এক নারীকে বিয়ের প্রলোভনে অপহরণ করে গণধর্ষণের অভিযোগে দুই আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলো, সদর উপজেলার উপজেলার চক-আবরশ গ্রামের ইসাহাক (৫০) ও টুকু সরদার (৫২)।
রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর মাননীয় বিচারক ও জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১২ মার্চ নওগাঁ সদর উপজেলার চক-আবরশ গ্রামের বাসিন্দা ইসহাক (৫০) ও টুকু সরদার (৫২) একই গ্রামের এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে। এরপর একটি নির্জন স্থানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাটি আদালতে গড়ায়।

দীর্ঘ ২৪ বছর পর মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে রায় দেন। এতে বলা হয়, আসামিদের এমন অপরাধ নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের চরম লঙ্ঘন। তাই তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে।
রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারক তাদের তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাহারায় কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌশলী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবার এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে মামলা চললেও ভুক্তভোগী নারী পরিবারসহ অনেক সামাজিক ও মানসিক চাপে ছিলেন। এই রায়ের মাধ্যমে সামাজিকভাবে একটি বার্তা পৌঁছেছে যে, নারীর প্রতি সহিংসতা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না এবং অপরাধের বিচার কখনো না কখনো হবেই।
উল্লেখ্য, এই রায় শুধুমাত্র এক ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচার নয়, বরং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে একটি সাহসী পদক্ষেপ। দীর্ঘ সময় বিচার প্রক্রিয়া চললেও শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব, সেটিই এই রায়ের সবচেয়ে বড় বার্তা।
বিআলো/তুরাগ