নারী দিবসের নেপথ্যে:সৈয়দা আনিকা রহমান
dailybangla
07th Mar 2025 9:45 pm | অনলাইন সংস্করণ
নারী শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক অপার শক্তি, মমতা, ভালোবাসা এবং ত্যাগের প্রতিচ্ছবি। নারী শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নন, তিনি সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির প্রতীক, সাহসের প্রতীক। নারী বহুরুপী। তিনি কখনো মা হয়ে জগৎ কে আলোকিত করেন,কখনো বোন হয়ে স্নেহের বন্ধন গড়েন,কখনো জীবনসঙ্গীর জীবন সুর হয়ে ধ্বংসস্তূপে ও জাগান আশার আলো। আবার কখনো কন্যারূপে বাবা মা এর গৌরবের কারণ হয়ে ওঠেন। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিবসের পূর্ব নাম ছিলো আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন হয়ে থাকে।এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য,কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় নেমেছিলো সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে সোশ্যাল ডেমোক্রাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭ টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনেই ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সমঅধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হবে।দিনটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রিকরা।
১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ই মার্চ পালিত হতে লাগলো। বাংলাদেশে ও ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। নারী দিবস পালনে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহবান জানায় জাতিসংঘ। প্রতি বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য, “অধিকার, সমতা,ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন” এ প্রতিপাদ্য নারী অধিকার নিশ্চিতকল্পে নির্দেশ দেয়, নারী পুরুষ বৈষম্য দূর করে সমতা স্থাপনের আওয়াজ তোলে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ” কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়ালক্ষী নারী।” মানবসভ্যতার বিকাশে নারী পুরুষের সমান অবদান। নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। নারী সমাজকে উপেক্ষা করে কোনো জাতির উন্নতি সাধন সম্ভব নয় যা মানুষ দ্ব্যর্থহীনভাবে মেনে নিয়েছে। তবে এখনো কেন নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করে দেখা হয়? কেন এখনো নারীরা বাহিরের কাজ করে সম্মানের সহিত ঘরে ফিরতে পারছে না? ধর্ষনের কালো থাবা কবে নারীদের মুক্তি দেবে?এই কালো ছায়া থেকে কবে নিরাপত্তা পেতে চলেছে নারী সমাজ! এসব পাশবিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলাই হোক আমাদের এবারের নারী দিবস পালনের মাধ্যম। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, যে সমাজ নারীর মর্যাদা দিতে জানে না, সে সমাজ কখনো উন্নতির শিখরে পৌছাতে পারে না।আজ নারীর অধিকার, সমতা এবং তাদের অর্জনকে উদযাপনের একটি দিন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অপরিসীম এবং তাদের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
নাম: সৈয়দা আনিকা রহমান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।