যৌতুক মামলা তুলে নিতে স্ত্রীকে হত্যার হুমকি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সানজিদা আফরিন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মিরপুর পল্লবীর বাসিন্দা সানজিদা আফরিন প্রভা অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী মো. রায়হান হোসেন তানভীর যৌতুক মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় গণধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেন, এমনকি আদালতে উপস্থিত হলে শারীরিকভাবে আঘাতের শিকারও হয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী।
গতকাল রাইট টক বাংলাদেশ নামক একটি সামাজিক সংগঠনের অফিসে লিখিত অভিযোগে সানজিদা জানান, ২০২১ সালে বরগুনার বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ ছোপখালীর বাসিন্দা মো. রায়হান হোসেন তানভীরের সঙ্গে ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক তার বিবাহ হয়। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি গর্ভবতী হন, কিন্তু তখন থেকেই স্বামীর পরিবারের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। তাকে মারধর করা হয়, মাথার চুলে আগুন দেওয়া হয়, এমনকি সন্তান গর্ভেই নষ্ট করে ফেলা হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করলে সন্তান জন্মের তিন মাস পর তানভীর স্ত্রী ও সন্তানকে ফেলে চলে যান এবং দীর্ঘ আড়াই বছর কোনো খোঁজখবর নেননি। শুধু তাই নয়, ভরণপোষণের দাবি অগ্রাহ্য করে উল্টো সানজিদার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা যৌতুক আদায় করেন তানভীর ও তার পরিবার। পরে আরও টাকা দাবি করলে তিনি মামলা করতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন সানজিদা। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ৯৬/২৪ (নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা), ৯০৮/২৪ (পারিবারিক মামলা), ও যৌতুক মামলা নং ৪২৩/২৩। এসব মামলায় তানভীর কয়েকবার কারাবরণ করেছেন। কিন্তু জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি ফের স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাপ দেন এবং মামলা তুলে না নিলে ভয়ংকর পরিণতির হুমকি দেন। আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তানভীরের আইনজীবীর মাধ্যমেও ভয়ভীতি দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালমন্দ করা হয় এবং গণধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তানভীরের অতীত সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি ২০১৮-১৯ সেশনে সরকারি বাংলা কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর থেকেই তিনি বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করেন। মাদক সেবন, নারীদের উত্ত্যক্ত করা ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তার এই জীবনযাপনের বিরুদ্ধে কথা বললেই সানজিদার ওপর নেমে আসত ভয়াবহ নির্যাতন।

বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সানজিদা আফরিন। তিনি রাষ্ট্র ও আদালতের কাছে নিজের এবং সন্তানের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছেন। এদিকে, অভিযুক্ত মো. রায়হান হোসেন তানভীরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিআলো/তুরাগ