রমজান পরবর্তীতে ব্যায়ামে ফেরার উপায়
dailybangla
29th Mar 2025 10:54 pm | অনলাইন সংস্করণ
ডা. এম ইয়াছিন আলী: রমজান শেষে ব্যায়ামে ফেরার জন্য ধাপে ধাপে ও সতর্কতার সাথে পুনরায় শরীরকে অভিযোজিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। নিচে কিছু নিয়ম দেওয়া হলো:
১. প্রস্তুতি ও মূল্যায়ন–
• শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন: রমজানের সময় শরীরের খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রামের পরিবর্তনের কারণে শারীরিক অবস্থা কিছুটা হালকা থাকতে পারে। তাই ব্যায়াম শুরু করার আগে নিজের শারীরিক অবস্থার মূল্যায়ন করে নিন, বিশেষ করে যদি দীর্ঘদিন ব্যায়াম না করে থাকেন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি পূর্বে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে থাকে, তবে নতুন রুটিন শুরু করার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা ভালো।
২. ধাপে ধাপে ওয়ার্কআউট রুটিন–
• হালকা শুরু করুন: প্রথম সপ্তাহে খুব বেশি ভারী ব্যায়াম না করে, হাঁটা, হালকা জগিং বা স্ট্রেচিং দিয়ে শুরু করুন। এতে শরীরকে ধীরে ধীরে রক্ত সঞ্চালন ও পেশির কার্যক্রমে ফিরতে সাহায্য করবে।
• ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন: প্রতিটি ব্যায়াম সেশনের আগে ৫-১০ মিনিট হালকা ওয়ার্ম আপ (যেমন—জম্পিং জ্যাকস, স্ট্রেচিং) এবং সেশনের পর ৫-১০ মিনিট কুল ডাউন করতে ভুলবেন না। এতে পেশিতে আঘাতের সম্ভাবনা কমবে।
• প্রগ্রেসিভ ইন্টেনসিটি: ধীরে ধীরে ব্যায়ামের ইন্টেনসিটি বাড়ান। প্রথম কিছু সপ্তাহে দিনে ২০-৩০ মিনিটের সেশন ঠিক থাকলে, পরবর্তীতে সময় ও ওজন বাড়িয়ে দিন।
• প্রথম সপ্তাহ: ২০-৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম (হাঁটা, স্ট্রেচিং)।
• দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহ: ৩০-৪৫ মিনিটের মৃদু কার্ডিও ও হালকা ওজনের ব্যায়াম।
• এরপর ধীরে ধীরে আপনার অভ্যাস ও শারীরিক সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যায়ামের ধরণ ও সময় বৃদ্ধি করুন।
• বিভিন্নতা ও ব্যালেন্স: কার্ডিও, শক্তি বৃদ্ধি (স্ট্রেংথ ট্রেনিং) এবং নমনীয়তা (স্ট্রেচিং, ইয়োগা) – এসব মিলিয়ে ব্যায়ামের রুটিন তৈরি করুন। এতে শরীরের সব অংশ সমানভাবে সক্রিয় থাকে।
৩. পুষ্টি ও হাইড্রেশন–
• পর্যাপ্ত পানি পান: রমজানের পরে শরীরের পানির অভাব পূরণ করা খুব জরুরি। ব্যায়াম করার আগে, চলাকালীন ও পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
• সুষম খাদ্যাভ্যাস: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খান। ব্যায়ামের পর প্রোটিন শেক বা হালকা প্রোটিনযুক্ত খাবার শরীরের পেশি পুনর্নির্মাণে সাহায্য করে।
• স্মল মিলস ও স্ন্যাকস: ব্যায়ামের পূর্বে ও পরে হালকা স্ন্যাকস (ফল, বাদাম, দই) গ্রহণ করতে পারেন, যাতে শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধার–
• ঘুম ও বিশ্রাম: ব্যায়ামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। শরীর পুনরুদ্ধারের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• সপ্তাহে একদিন ‘রেস্ট ডে’: প্রতিটি সপ্তাহে এক বা দুইদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন যাতে পেশি রিকভার হতে পারে।
• শরীরের সঙ্কেত শুনুন: ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলে তৎক্ষণাৎ হালকা ব্যায়াম বা বিশ্রাম নিন। শরীরকে অতিরিক্ত চাপ দিলে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে।
৫. মনোযোগ ও ধারাবাহিকতা–
• লক্ষ্য নির্ধারণ: ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং ধীরে ধীরে এগুলো অর্জন করুন। প্রথমদিকে নিজেকে অত্যধিক চাপ দেবেন না।
• ব্লগ বা ফিটনেস অ্যাপ ব্যবহার: ব্যায়ামের ট্র্যাক রাখার জন্য ফিটনেস অ্যাপ বা ডায়েরি ব্যবহার করুন। এতে আপনি ধাপে ধাপে অগ্রগতি দেখতে পারবেন এবং প্রেরণা পাবেন।
• পরামর্শ ও সহযোগিতা: আপনার বয়স, কাজের ধরন বা পেশা অনুযায়ী কি ধরনের ব্যায়াম করা প্রয়োজন এ বিষয়ে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিন।
এসব নিয়ম মেনে চললে রমজানের পর শারীরিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নিরাপদ ও কার্যকরভাবে ব্যায়ামে ফিরে আসা সম্ভব। ধীরে ধীরে অনুশীলন ও সঠিক পুষ্টি ও বিশ্রাম বজায় রাখলে শরীর দ্রুত ও সুস্থভাবে অভিযোজিত হবে।
লেখকঃ ডা: এম ইয়াছিন আলী, বাত, ব্যাথা, পারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
মোবা : ০১৭১৭ ০৮ ৪২ ০২
বিআলো/শিলি