নির্বাচনের আগে বিচার-সংস্কার দৃশ্যমান করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান
সজীব আলম, লালমনিরহাট: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ অবস্থায় যে কোনো নির্বাচনে আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে খুনীদের বিচার, এ বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। আরেকটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার। এই দুইটা কাজ ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নিবে না। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজনে জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বারবার তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, এবারের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বিনয়ের সাথে বলবো, আমরা নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, আমরা চুরি চামারি, কালো টাকার পেশি শক্তির প্রভাব যুক্ত নির্বাচন দেখতে চাই না। এই নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সমতল মাঠ তৈরি করতে হবে। এই দায়িত্ব পালনের জন্য আপনারা যতো সহযোগিতা চান, সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। বিচার আর সংস্কার এই দুটো করে অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার বিপ্লবী জনগণকে কোনো ভাবে দাবিয়ে রাখতে পারে না। তারা (আওয়ামী লীগ) তেমনি বাংলাদেশের বিপ্লবী জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারেননি। সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন, ত্যাগ এবং কোরবানি সব কিছুর শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে আমাদের যুব সমাজের নেতৃত্বে তারা গদি ছাড়তেই শুধু বাধ্য হননি, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা বলি, এদেশের সত্যিকারের দেশ প্রেমিক নাগরিক যারা, তারা কখনোই দেশ থেকে পালানোর চিন্তাও করে না। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা দেশ ছেড়ে পালায় না। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা কানাডা, মালয়েশিয়ায় বেগম পাড়া গড়ে তোলে না। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করে না। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা জনগণের করের টাকায় কেনা অস্ত্র আর গুলি জনগণের বুকে তাক করে না। তারা সবই করেছে। তারা চেয়েছিলেন, অতীতের ফ্যাসিস্টের শিরোমণি ফেরাউনের মতো এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আল্লাহ যেভাবে ফেরাউনদের অতীতে বিদায় দিয়েছেন, এদেশেও ফ্যাসিবাদের ধারক বাহক যারা ছিলো, তারা অপমান জনক ভাবে বিদায় নিয়েছে। এমনকি যাওয়ার সময় নিজের সহকর্মীদেরকেও বলে যেতে পারে নি যে আমি অমুক জায়গায় চলে যাচ্ছি। তারা আপসোস করে বলেছে, এমন একটি দল করলাম, নিরাপদে তিনি চলে গেলেন, কিন্তু আমাদের কি হবে তা বলে গেলেন না! এমন রাজনীতি বড় লজ্জার রাজনীতি। এই দল যারা করতেন সরকারের ইশারা ইংগিতে যারা মানুষের ওপর জুলুম করেছেন। আশা করি তারা এখন বুঝতে পেরেছেন। জনগণের বিপক্ষে দাড়িয়ে কখনো কেউ পার পায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি জীবন্ত কারাগারে পরিনত করা হয়েছিল। ভেতরের কারাগার থেকে বাইরের কারাগার ছিলো আরও দুঃসহ। ভেতরের কারাগারে নতুন করে মামলা দেওয়ার সুযোগ ছিলো না। বাইরের কারাগারে থাকলে প্রতিনিয়ত বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী, আলেম ওলামা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মের লোকের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা চেয়েছিলেন, মামলা করে, হামলা করে, খুন করে, গুম করে, আয়না ঘরে বন্দী করে এই বাংলাদেশের মানুষের কন্ঠকে স্তব্ধ করে দিবে। এভাবে মানুষ কে দাবিয়ে রাখা যায় না। তিনি সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা একটি দূরবর্তী বর্ডার এলাকা। এই বর্ডার এলাকায় দুই তিন দিন আগে, আমাদেরই এক সন্তান হাসিনুর রহমান, সে একজন অতি সাধারণ শ্রমিক ছিলো। এক ভাই এক বোনের সংসার। সে গিয়েছিল গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে, সেখানে বুকের ওপর পা রেখে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। খুন করে তার লাশটি টেনে হেঁচড়ে ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করি সে কি মানুষ ছিলো না? যারা হত্যা করেছে ওরা কি মানুষ নয়? কিভাবে তারা ঠান্ডা মাথায় সীমান্ত পেরিয়ে এখানে এসে মানুষকে হত্যা করতে পারে? এটিতো একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের বিজিবি যারা আছে, তারা কি ওই পারে গিয়ে এগুলো করে? কারণ আমরা তাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং তাদের কে সন্মান দেখাই। সেই সন্মান টুকু বাংলাদেশের জনগণের পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা ৫৩ বছর সেই অধিকার পাইনি। আমাদের কে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। আধিপত্যবাদের কালো ছায়া আমাদের ঘাড়ের ওপর ছিলো। আমরা এ ছায়া দেখতে আর দেখতে চাই না। ইন্ডিয়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের সাথে আমরা সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে আমরা প্রতিবেশি হিসেবে এখানে বসবাস করতে চাই। আমরা ভালো থাকলে তারা ভালো থাকবেন, আমাদের ভালো কেড়ে নিলে তাঁরাও ভালো থাকবেন কিনা তাদেরকে চিন্তা করতে হবে। আমরা দেখতে চাই উভয় ভালো থাকবো। সেই পরিবেশ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। তিনি তিস্তা ইস্যু নিয়ে বলেন, তিস্তার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই উত্তর জনপদের মানুষ আতংকে থাকে – কি হবে আজ আমাদের কপালে। তিস্তা পাড়ের মানুষ ভালো করে একটা ঘরবাড়িও তৈরি করে না। কারণ বন্যার স্রোতে ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই দুঃখ মুছে যাক আমরা চাই। এজন্য তিস্তা মহা পরিকল্পনা কোনো ধরনের চোখ রাঙানোর তোয়াক্কা না করে, গড়িমসি না করে, অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
লালমনিরহাট জেলা জামায়াতে আমীর আব্দুল বাতেনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর মহানগর আমীর অধ্যাপক গোলাম রোব্বানী ও সেক্রেটারী আনোয়ারুল হক কাজল, জামাতের রংপুর দিনাজপুর আঞ্চলিক পরিচালক মমতাজ উদ্দিন, লালমনিরহাট জেলা জামাতের সাবেক আমীর হাবিবুর রহমান ও সাবেক আমীর আতাউর রহমান, খেলাফতে মুসলিম জেলা শাখার সভাপতি আবুল কাসেম, কুড়িগ্রাম আমীর আব্দুল মতিন প্রমুখ।
বিআলো/শিলি