নির্যাতনের মাস্টার খ্যাত ডিবির এডিসি রুহুল বহাল তবিয়তে
নজরুল ইসলাম জুলু, রাজশাহী: জুলাই বিপ্লবে রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার উপর হামলার পরিকল্পনা এবং বাস্তবাায়ন ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের বিশ্বস্ত এজেন্ট বাস্তবায়ন, বিরোধী মতের মানুষদের নির্যাতনে তৎকালীন রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার ড. রুহুল আমিন সরকারের জুড়ি নেই।
৫ আগষ্টের পর তার বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হলেও এখনো তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে দায়ের করা মামলাগুলো হওয়ার পরেও তিনি এখন নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, ড. রুহুল আমীন সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও বিএনপি- জামায়াতের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানোর পাশাপাশি বেআইনি গ্রেপ্তাার, নির্যাতন ও ঘুষ গ্রহণের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তিনি ৩১তম বিসিএসের মাধ্যেমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।
একাধিক সূত্র জানায়, তৎকালীন রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি হাফেজ খায়রুল ইসলামের বিয়ের আসর থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার ফলে বিয়েটি ভেঙে যায়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে সবাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।
এছাড়া, বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচির ব্যানার প্রিন্টের অভিযোগে চিত্রলেখা প্রিন্টিং প্রেসের মালিক নজরুল ইসলামকে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই ঘটনায় ডিজাইনার সাকিবসহ দু’জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নগরীর একটি হোটেলে খাবার খাওয়ার সময় পাঁচজন মাদ্রাসা শিক্ষককে জামায়াতের নেতা বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে, রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির আতাউর রহমানের স্ত্রীর জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের ওপর গোরস্থানে তার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাসরিফুল ফারুক ও আরিফুল নামে স্থানীয় দুজন বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারি সিফাত আলমকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের করা অভিযোগ ওঠে। রাজশাহী কোর্ট চত্বরে হাজিরা দিতে আসা জামায়াত ও শিবির নেতাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টার সময় ১০ জন নিরীহ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনজন সাংবাদিককের আটক করা হয়।
ভুক্তভুগী নগরীর বিলসিমলা এলাকার শিমুল নামের একজন অভিযোগ করেন, শিবিরের কর্মী সন্দেহে তাকে কানে টানা ১৫টি চড় মেরে তাকে বধির করে দেওয়া হয়। এছাড়া, শুধুমাত্র দাড়ি রাখার কারণে সাধারণ ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন জনসাধারণ।
মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সৈকত হাসান বলেন, মামলাটি স্বাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ইজহার নামীয় সকল স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় হবে।
বিআলো/শিলি