• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    কোরবানির আদি ইতিহাস রফিকুল ইসলাম (রানা) 

     dailybangla 
    10th May 2025 9:12 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    কোরবানি আভিধানিক অর্থ. আরবী কোরবান শব্দটি ফারসী বা উর্দুতে কোরবানি রূপে পরিচিত লাভ করছে, যাহার অর্থনৈকট্য। আর কোরবান শব্দটি কুরবাতুন শব্দ থেকে উৎপন্ন। আরবী কুরবাতুন এবং কোরবান উভয় শব্দের শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কারো নৈকট্য লাভ করা ইত্যাদি।
    কোরবানির পারিভাষিক অর্থ. শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যে পশু যবেহ করা হয় তাহার নামই কোরবানি। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা হজ্জ এর ৩৪ নাম্বার আয়াতে বলেন.
    প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানির একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা সে পশুদের ওপর আল্লাহর নাম নেয় যেগুলো তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। (এ বিভিন্ন নিয়মের উদ্দেশ্য একই) কাজেই তোমাদের ইলাহ সে একজনই এবং তোমরা তারই ফরমানের অনুগত হয়ে যাও। আর হে নবী! সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে।
    আমি এই লেখাটিতে ২টি ঘটনা বর্ণনা করব। প্রথম. হযরত আদম (আ.) এর পুত্রদ্বয়ের কোরবানি এবং দ্বিতীয়. হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পুত্র ইসমাইল (আ.) এর কোরবানি এবং সর্বশেষ কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর বানি।
    পবিত্র কোরআন মাজিদে বর্ণিত হাবীল ও কাবীল দ্বারা সম্পাদিত কোরবানির এ ঘটনা থেকেই মূলত কোরবানির ইতিহাসের সুচনা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা দেখতে পেলাম যে, কোরবানি দাতা হাবীল, যিনি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি সুন্দর দুম্বা কোরবানি হিসেবে পেশ করেন। ফলে তার কোরবানি কবুল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল, সে অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কোরবানি হিসেবে পেশ করে। ফলে তার কোরবানি কবুল হয়নি। এখানে প্রমান হলো কোরবানি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবুল হয় না। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সুরা হজ্জের ৩৪ নাম্বার আয়াতে বলেন.
    অর্থাৎ প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানির বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন।
    প্রথম. হাবীল ও কাবীলের ইতিহাস হলো, যখন হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা- এরূপ যমজ সন্তান জন্ম গ্রহণ করত। তখন ভাই-বোন ছাড়া হযরত আদমের (আ.) আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ তা’আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.)-এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নিদের্শ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হবে হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণকারী পুত্রের জন্যে সম্পর্ক প্রথম গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণকারিনী কন্যা সহোদরা বোন গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। কিন্তু ঘটনাচক্রে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোনটি ছিল পরমা সুন্দরী এবং হাবিলের সহজাত বোনটি ছিল কুশ্রী ও কালো। বিবাহের সময় হলে শর’য়ী নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত কুশ্রী ও কালো বোন কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে, আমার সহজাত বোনকেই আমার সাথে বিবাহ দিতে হবে। হযরত আদম (আ.) তার শরীয়তের আইন অনুযায়ী কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন। অত.পর হযরত আদম (আ.) হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্যে নিজ নিজ কুরবানি পেশ কর। যার কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে, সে-ই সুন্দরী কন্যা বিয়ে করবে। হযরত আদম (আ.)-এর নিশ্চিত বিশ্বাস যে, যেই সত্য পথে আছে তার কোরবানিই গৃহীত হবে।
    ঐ সময় কোরবানি গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কুরবানিকে ভস্মিভূত করে আবার অন্তর্হিত হয়ে যেত। যে কোরবানি অগ্নি ভস্মিভূত করতো না, তার কোরবানি কবুল হয় নাই বলে মনে করা হতো। হযরত আদম (আ.) এর এক পুত্র হাবীল ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু পালন করতো। সে একটি উতকৃষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। অন্যপুত্র কাবিল করতো কৃষি কাজ। সে কিছু শস্য-গম ইত্যাদি কোরবানির জন্য পেশ করলো। অত.পর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা অবতরণ করে হাবীলের কোরবানিটি ভস্মীভূত করে দিলো এবং কাবীলের কোরবানি যেমন ছিল তেমনই পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দু.খ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল সে আত্ম সংবরণ করতে পারলো না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলে, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করবো। হাবীল তখন রাগের জবাবে রাগ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করলো যা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদা (২৮-৩১) নাম্বার আয়াতের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন.
    অর্থ. তুমি আমাকে মেরে ফেলার জন্য হাত উঠালেও আমি তোমাকে মেরে ফেলার জন্য হাত উঠাবো না, আমি বিশ্ব জাহানের প্রভু আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই আমার ও তোমার পাপের ভার তুমি একাই বহন করো এবং তুমি জাহান্নামী হয়ে যাও জালেমদের জুলুমের এটিই সঠিক প্রতিফল। অবশেষে তার প্রবৃত্তির কুপ্ররোচনা তার ভাইকে মেরে ফেলা তার জন্য সহজ করে দিল এবং তাকে মেরে ফেলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো। তারপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন সে মাটি খুঁড়তে লাগলো, যাতে তাকে দেখিয়ে দেয় তার ভাইয়ের লাশ কিভাবে লুকিয়ে ফেলবে এ দৃশ্য দেখে সে বললো হায় আফসোস আমি এ কাকটির মতোও হতে পারলাম না যাতে নিজের ভাইয়ের লাশটিও লুকাতে পারি এরপর নিজের কৃতকর্মের জন্য সে খুবই অনুতপ্ত হলো। আমরা আজ মুসলমানরা যে নিয়মনীতি মেনে পশু কোরবানি করি তা হচ্ছে হযরত ইবরাহীম আ. এর কোরবানি। আর এভাবেই হযরত আদম আ. এর সময় থেকেই কোরবানি চালু হয়েছে যা এক এক নবীর উপর ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও নিয়মে আল্লাহ তায়ালা কোরবানি চালু রেখেছেন।
    দ্বিতীয়. হযরত ইবরাহীম (আ.) এর ১০০ বছর বয়সের পর আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি পুত্র সন্তান দান করেছিলেন, তিনি আল্লাহ তায়ালা নির্দেশে তার সে কলিজার টুকরা হযরত ইসমাইল (আ.) এর কোরবানির সূত্র ধরে আজও সেই কোরবানি প্রচলিত আছে। হযরত ইবরাহীম (আ.) নমরুদ ও তার দল বলের অত্যাচারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তার স্ত্রী হযরত সারাকে সঙ্গে নিয়ে শাম দেশে হিজরত করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশাহ ছিল জালিম ও ভীষণ বদলোক। বাদশাহর লোকেরা হযরত ইবরাহীম (আ.) ও তার সুন্দরী স্ত্রী হযরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশাহর দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশাহ তাদেরকে ধরে নিয়ে আসার হুকুম দিলেন।
    বাদশাহর লোকজন হযরত ইবরাহীম (আ.) ও তার স্ত্রী সারাকে বাদশাহর দরবারে হাজির করে। বাদশাহ হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কাছে জানতে চায় তার সঙ্গে স্ত্রী লোকটি কে? ইবরাহীম (আ.) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তো বা তাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই তিনি বললেন, সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশাহ হযরত ইবরাহীম (আ.) কে বন্দী করে, আর হযরত সারাকে বাদশাহর কাম বাসনা করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশাহর কু-প্রস্তাবে হযরত সারা রাজি না হওয়ায় বাদশাহ তাকে হত্যার হুমকি দেয়। হযরত সারা কোন রকম উপায় অন্ত না পেয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশাহ তাকে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়। হযরত সারা নামাজ শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেন- যেন আল্লাহ তায়ালা তার সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশাহ অত্যন্ত অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশাহর মৃত্যুর জন্য তার লোকেরা হযরত সারাকে দায়ী করবে এই ভেবে হযরত সারা বাদশাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশাহ হযরত সারার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হযরত হাজেরাকে তার দাসী হিসেবে দিয়ে তাদেরকে বিদায় করে দেয় বাদশাহ।
    হযরত সারা ও হযরত ইবরাহীম (আ.) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হযরত সারা তার দাসী হযরত হাজেরাকে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সঙ্গে বিয়েদেন। কারণ হযরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হযরত ইবরাহীম (আ.) এর বয়স তখন ১০০ বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও তখনও হযরত সারা মা হতে পারেননি। তিনি ভাবলেন, শেষ বয়সে যদি আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে তার স্বামী হযরত ইবরাহীম (আ.) কে কোনো সন্তান দান করেন। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে এই হযরত হাজেরার গর্ভেই হযরত ইসমাইল (আ.)-এর জন্ম হয়। হযরত ইসমাইল (আ.) এর জন্মের পর হযরত ইবরাহীম (আ.) তার স্ত্রী হযরত হাজেরা ও কলিজার টুকরা ছেলেকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে কিছু খেজুর ও এক মসক পানিসহ রেখে আসেন।
    হযরত ইবরাহীম (আ.) যখন তাদের এ অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হযরত হাজেরা প্রশ্ন করছিলেন, আপনি আমাদের এ নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন ? হযরত ইবরাহীম (আ.) ক্ষীণকন্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। আবারও হযরত হাজেরা প্রশ্ন করলেন এটা কি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ? হযরত ইবরাহীম (আ.) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হযরত হাজেরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তার শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করলেন।
    হযরত হাজেরা ও তার সন্তানের খাদ্য ও পানীয় যখন শেষ হয়ে গেল হাজেরা তখন খাদ্য ও পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। শিশু পুত্রের কান্নায় বার বার এভাবে খাবার ও পানির সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, শিশু পুত্র ইসমাইলের পায়ের গোড়ালির আঘাতে মাটি ফেটে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হচ্ছে। এ সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে জমজম নামে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহের কাছে পরিচিত। বরকতময় পানীয় হিসেবে পান করে পরিতৃপ্ত হন সারা পৃথিবীর মুসলমানরা। তাও কাবাকে কেন্দ্র করে ও হযরত ইসমাইল (আ.) এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছে। যা আজও হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাজেরা তার মসক পূর্ণ করে নিলেন আর নিজে ও শিশু পুত্রকে তৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করালেন। হযরত হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তায়ালা হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন।
    হযরত ইসমাইল (আ.) এর যখন হাটাচলা ও খেলাধূলা করার বয়স তখন হযরত ইবরাহীম (আ.) কে স্বপ্নে আদেশ করা হলো, তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো। ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে দেখার পরে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারও একই স্বপ্ন দেখলেন। অত.পর ইবরাহীম (আ.) আবারও ১০০টি উট কোরবানি করলেন। আবার তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো এ মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর তেমন কোনো প্রিয় বস্তু নেই। এর পর ইসমাইল (আ.) এবং ইসমাইল (আ.) এর সঙ্গে যে কথোপ কতন হয় তা আল্লাহ তায়ালা সুরা সাফফাতে ১০২, ১০৩ নাম্বার আয়াতে বলেন.
    সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছলো তখন একদিন ইবরাহীম তাকে বললো, “হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি যবেহ করছি, এখন তুমি বল তুমি কি মনে করো?” সে বললো, “হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ সবরকারীই পাবেন।” শেষ পর্যন্ত যখন এরা দুজন আনুগত্যের শির নত করে দিল এবং ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল।
    সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (র.) তার তাফসির তাফহীমুল কোরআনে বলেন, পুত্রকে একথা জিজ্ঞেস করার এ অর্থ ছিল না যে, তুমি রাজি হয়ে গেলে আল্লাহর হুকুম তামিল করবো অন্যথায় করবো না। বরং হযরত ইবরাহীম আসলে দেখতে চাচ্ছিলেন, তিনি যে সৎ সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন সে যথার্থই কতটুকু সৎ। যদি সে নিজে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে, তাহলে এর অর্থ হয় দোয়া পুরোপুরি কবুল হয়েছে এবং পুত্র নিছক শারীরিক দিক দিয়েই তার সন্তান নয় বরং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও তার সুসন্তান।হযরত ইবরাহীম (আ.) যবেহ করার জন্য পুত্রকে চিৎ করে শোয়াননি বরং উপুড় করে শুইয়ে দিয়েছেন, যাতে যবেহ করার সময় পুত্রের মুখ দেখে কোন প্রকার স্নেহ-মমতার বসে তার হাত কেঁপে না যায়। তাই তিনি নিচের দিক থেকে হাত রেখে ছুরি চালাতে চাচ্ছিলেন। তখন আল্লাহর নির্দেশে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। নিশ্চয়ই এটি ছিল ইবরাহীম ও ইসমাইলের জন্যে একটা পরীক্ষা। এর পর থেকে সমস্ত মানুষের জন্যে এ কোরবানির বিধান চালু হয়ে গেছে। যা আজ পর্যন্ত মুসলিম সমাজে অত্যন্ত ভাব গাম্ভির্যের মাধ্যমে পালন করা হয়ে আসছে।
    হযরত ইবরাহীম (আ.) ত্যাগের সু-মহান ও অনুপম দৃষ্টান্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতের উপর পশু কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। উম্মতে মুহাম্মদির কোরবানি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কোরবানিকে স্মরণ করিয়ে দেয়া। মুলত এটা ইবরাহীম (আ.) সুন্নত। ইবরাহীম (আ.) এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গোটা জীবনটাই ছিল কোরবানি তথা আত্নত্যাগের মহিমায় উজ্জল নিদর্শন । প্রাণের চেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে কোরবানি করা ছিল ইবরাহীম (আ.) এর জীবনের অসংখ্য কোরবানির চরম ও শ্রেষ্ঠতম ঘটনা। তাদের স্মরণ পশু কোরবানির এ বিধান রোজ কেয়ামতের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
    আমাদের নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) কোরবানির গুরুত্বের ব্যাপারে সাহাবীদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন. ‘হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি প্রথাটা কী?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের কী লাভ রয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুম্বা, ভেড়া ও উটের পশমের বিনিময়ে কি এ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ৩১২৭)
    পরিশেষে আমরা বলতে পারি ত্যাগের মহিমায় উজ্জিবিত হয়ে পৃথিবীর শুরু থেকে চলে আসা মানুষের আর্থিক কোরবানি যা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তার নিয়ম অনুযায়ী চলে আসছে। বর্তমান সময় হযরত ইবরাহীম (আ.) এর নিয়ম অনুযায়ী যদি আমরা কোরবানি করতে পারি পূর্ণ তাকওয়া এবং মনের পশুত্বকে দুরভীত করে তা হলে আমরা পরিপূর্ণভাবে কোরবানির ফজিলত অর্জন করতে পারবো। এই অর্থনৈতিক কোরবানির কারনে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। (আমিন)
    শিক্ষক, তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ শাখা।

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930