ইসলাম দিয়েছে নারীর শ্রেষ্ঠ অধিকার:রফিকুল ইসলাম রানা
নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। ইসলাম তাদের সর্বোচ্ছ মর্যাদা দান করছেন ইসলাম। ইসলামে নারীর মর্যাদা অনেক উপরে যা অন্য কোনো ধর্মে নারীকে এত উপরে। ইসলামে নারীর চেয়ে পুরুষের অধিকার বেশি বলে অনেকেই মনে করেন। আসলে ইসলামে নারী ও পুরুষের অধিকার সমান। কিন্তু সেটা এক এক ক্ষেত্রে এক এক রকম, গড়ে সমান। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নারীর অধিকার নিয়ে সুরা নিসার ১৯নাম্বার আয়াতে বলেনঃ হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা নারী জাতীদেরকে চৌদ্দশত বছর আগে তার প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। নারী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে পরিচিত হয় সে কখনো শিশু, কখনো কিশোরী, কারো মেয়ে, কারো স্ত্রী, কারো মা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় বহন করে থাকে। সকল ক্ষেত্রে ইসলাম তাকে সমান অধিকার দিয়েছে। তবে অনেক সময় দেখা যায় ইসলাম তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন কিন্তু না এক যায় একটু কম দিলেও অন্য যায়গা দিয়ে পুশিয়ে দিছেন। ইসলাম সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন নারী জাতীদেরকে। নি¤েœ তাদের মর্যাদা গুলো উল্লেখ করার চেস্টা করছি।
মায়ের মর্যাদা প্রদান: ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সাঃ) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারী)।
বিয়ের মাধ্যমে মর্যাদা প্রদান: ইসলাম পূর্ব যুগে বিবাহের ক্ষেত্রে নারীদের কোনরূপ স্বীকৃত অধিকার ছিল না। তারা ছিল পুরুষের ভোগের বস্তু। ইসলাম এহেন ঘৃণিত প্রথার মূলোৎপাটন করে নারী-পুরুষের বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ক স্থাপন করার বিধান প্রণয়ন করেছে।
মেয়ে হিসেবে মর্যাদা প্রদান: সন্তাানের ব্যাপারে ইসলাম পুত্রের ওপর কন্যাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। জাহেলী যুগের কন্যা সন্তাান প্রোথিত করা সংক্রান্ত ব্যাপারে আল-কোরআনে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “কিয়ামতের সেই দিনে কন্যা সন্তানকে জিজ্ঞেস করা হবে, কেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল।’ মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তাান থাকবে আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’
নারীকে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা প্রদান: ইসলাম স্ত্রী হিসেবে নারীকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ কর।’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘নারীর ওপর যেমনি অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর। হাদীসে এসেছে- ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’
নারীকে সম্পত্তির অধিকারে মর্যাদা প্রদান: ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদেরকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত। কিন্তু ইসলামে নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদাসহ তাদের পৈতৃক ও স্বামীর সম্পত্তিতে নির্ধারিত অংশ দেয়া হয়েছে যা মিলে একজন পুরুষের সমান সম্পতির মালিক হন।
নারীকে নারীকে মহরানা মাধ্যেমে সম্মান প্রদান: ইসলাম পূর্ব যুগে বিবাহের ব্যাপারে কোন স্থায়ী বিধান ছিল না। ফলে নারীদের জীবন ছিল অনিশ্চিত। পরবর্তীতে ইসলাম পুরুষ কর্তৃক নারীকে মহরানা দিয়ে বিয়ে করার প্রথা প্রচলন করে। এতে তাদের মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়।
নারীকে সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহনের সুযোগ: ইসলাম সেবামূলক কর্মকান্ডে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও সমান অধিকার প্রদান করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারী চিকিৎসক হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারী অধ্যাপক হতে পারে, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে জীবনের সার্বিক ভাবে নারীরা সুনিয়ন্ত্রিত পন্থায় অবস্থান করে সেবামূলক কাজে ব্রতী হতে পারে।
নারীকে চাকরির অধিকার প্রদান: ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে অর্থকরী কর্মে নিয়োজিত হবার অধিকার প্রদান করেছে। যা রাসুলের পূর্ব যুগে কল্পনা করাই কঠিন বিষয় ছিল।
নারীকে সংসারের তত্ত্বাবধানে মর্যাদা প্রদান: ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ-নারী পরস্পরের প্রতিযোগী নয় বরং সহযোগী। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্তাবধানকারিণী।
নারীকে শিক্ষার অধিকার প্রদান: ইসলাম নারীকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের জন্যও বিদ্যা শিক্ষা ফরয করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নর-নারীর বিদ্যা অর্জন করা ফরয’।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ইসলামতো নারীকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিয়েছে, কিন্তু এর সুফল তারা পাচ্ছে না। মোহর ও মীরাছ একে তো তারা পায়না, যা পায় তা বিনিয়োগ করতে পারে না। কয়েকজন নিষ্ঠাবান ও উদ্যোগী আলিম যদি এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে তাহলে বিরাট কাজ হয়। তারা নিজেদের মহলেই এটা শুরু করুক, একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে, তারপর ধীরে ধীরে তা সম্প্রসারিত করুক। ব্যাংক নাম হওয়াারও তো দরকার নেই। যদি এখলাছের সঙ্গে সঠিক নিয়মে এটা করা হয়, ব্যক্তিগত ফায়দার চিন্তা যদি না করা হয়, বরং উম্মতের অসহায় নারীসমাজের সেবা ও কল্যাণের চিন্তা শুধু করা হয়, তাহলে আমার বিশ্বাস, অবশ্যই আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন। আজকের এই সভ্যতার যুগে প্রগতিশীল অপশক্তি নারীমুক্তি নামে নারীকে আবার প্রাক-ইসলামী যুগের সেই যাতনাক্লিষ্ট অমর্যাদাকর জীবনের দিকে ধাবিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষ্য এটাই, যথার্থ মর্যাদা ও মুক্তির স্বাদ পেতে হলে নারীদেরকে ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। ইসলাম একমাত্র মুক্তির ঠিকানা।